মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখবেন প্রধান উপদেষ্টা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমদানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিষয়গুলো মোকাবেলায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিজে মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন। এখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং যোগাযোগ রয়েছে তা কাজে লাগানো হবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে যে প্রতিযোগীরা রয়েছে তা বিবেচনায় নিলে আরও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রেস ব্রিফিংয়ে।
সম্প্রতি ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের ওপরও শুল্কের হার বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকটি শুরু হয়। সোয়া আটটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে না, বরং আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান তিনি। শফিকুল আলম বলেন, আশা করি আমাদের রেসপন্স ইতিবাচক হবে। এখন যা রপ্তানি হচ্ছে এর থেকে আরও বাড়বে এবং সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশ রপ্তানি করে এমন সব দেশেই রপ্তানি বাড়বে।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক মোকাবেলায় আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমদানি বাড়াতে হবে। যেমন অন্য রাষ্ট্র থেকে আমরা তুলা, যন্ত্রাংশ, জ্বালানিপণ্য আমদানি করতাম। এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করবো। তিনি বলেন, এগুলো বৃদ্ধির জন্য কিছু বাণিজ্যিক বাধা রয়েছে। সেগুলো দূর করা হলে আমরা আমদানিটা বাড়িয়ে দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রতিযোগীরা আছে তাদের চেয়ে আমাদের তৈরি পোশাকের মান এবং অবয়ব আলাদা এবং ইউনিক। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে আমাদের স¤াবনার দুয়ার খুলে যেতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটিটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। বিষয়টি হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সাথে নিবিড়ভাবে লেগে আছি। ধারণা করছি আমরা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করলে ইতিবাচক সাড়া পাবো।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অংশ নেন।
বৈঠক শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ট্যারিফ বৃদ্ধি নিয়ে শনিবার দুপুরে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে বৈদেশিক বিনিয়োাগ কর্তৃপক্ষ। তাদের সুপারিশ ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা বৈঠকে বসেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশসহ ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। যা এতোদিন ছিল ১৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ দেশটিতে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। যার বড় অংশই তৈরি পোশাক। দেশগুলো মধ্যে ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, চীনের ৩৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ৩৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৫ শতাংশ, জাপানের ২৪ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে চীন ও প্রতিবেশী কানাডা। চীন ৩৪ শতাংশ ও কানাডা ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে।