দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন শুরু করার ঘোষণা করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষা উপদেষ্টার ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’-এর প্রতিবাদ ও দ্রুত বাড়ি ভাড়া, মেডিকেল ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে গতকাল শুক্রবার তারা এ কর্মসূচি পালন শুরু করছেন। এর আগে, সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৮০০ শিক্ষক-কর্মচারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শহীদ মিনার থেকে শিববাড়ি মোড় ঘুরে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যান এবং সেখানে সকাল ১১টা ৫৫ থেকে ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে মিছিলটি পুনরায় শহীদ মিনারে ফিরে আসে। এসময় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, বিপন্ন, হতাশাগ্রস্ত শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। এটাকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না। ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী একত্রিত হলে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের চার লাখ সদস্য তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর ভিপিসহ অসংখ্য জনমানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের নির্বাচিত ভিপির সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে প্রতিজ্ঞা করেছি, ন্যায্য দাবি আদায় না করে শহীদ মিনার ত্যাগ করবো না। সমাবেশ শেষে শনিবার দুপুর ১২টায় কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, সরকার শিক্ষকদের পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও বলা হয়েছে ন্যূনতম বাড়িভাড়া ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি হবে। এর ফলে যাদের বেতন স্কেল ২০ হাজার টাকার কম তাদের বাড়িভাড়া মূলত দশ শতাংশই বাড়বে। তিনি বলেন, যতদূর জানি অধিকাংশ শিক্ষকের মূল বেতনই ২০ হাজার টাকার কম। সুতরাং তাদের দাবির একটা বড় অংশ এতেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের এই দাবি অনেকটাই ন্যায্য। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করেছি। শিক্ষকদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। তাদের বাড়িভাড়ার দাবি পূরণ করা গেলে সেটা সব দিক থেকে সবার জন্য আনন্দদায়ক হবে। আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, তবে এই দাবি আদায় করতে গিয়ে শিক্ষকরা যদি জনদুর্ভোগ করে সৃষ্টি করেন সেটা হবে দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তাদের দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের বাড়িভাড়া কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এই বিষয়ে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, আপাতত পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আগামী বাজেটের আগে আরও পাঁচ শতাংশ যাতে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু শিক্ষকদের অনেকেই চাইছেন সরকার এখনই যেন তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়। এটা কতটা বাস্তবসম্মত তা বিবেচনার দাবি রাখে।
উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, সরকার পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও বলেছে ন্যূনতম বাড়িভাড়া বৃদ্ধি হবে ২,০০০ টাকা। এর ফলে যাদের বেতন স্কেল ২০ হাজার টাকার কম তাদের বাড়িভাড়া মূলত দশ শতাংশই বাড়বে। যতদূর জানি অধিকাংশ শিক্ষকের মূল বেতনই ২০ হাজার টাকার কম। সুতরাং তাদের দাবির একটা বড় অংশ এতেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব স্কুল এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করেছে তাদের শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি সরকার অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে। কিন্তু আমাদের এটাও ভেবে দেখতে হবে এমপিওভুক্ত হয়েছে কারা? বছরের পর বছর রাজনৈতিক বিবেচনায়, তদবিরের জোরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক থাকুক না থাকুক, তারা এমপিওভুক্ত হয়েছে। কোনো রকম একটা ছাপড়ি ঘর হলেই হলো।