রাজধানী থেকে বের হওয়া পর ঢাকা-চট্রগ্রাম , ঢাকা-সিলেট , ঢাকা - আরিচা ও ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে এসব মহাসড়কের দ্ইু পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবজর্না। এতে করে একদিকে দূর পাল্লার যানবাহন চলচলে যেমন গতি কমছে তেমনি দুর পাল্লার যানবাহনের যাত্রীদের কিছু পথ গেলেই দুগন্ধে নাক চেপে ধরতে হচ্ছে। এছাড়া মহাসড়ক সংকীর্ণ হওয়ার কারনে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সূত্র জানায়, ঢাকার উপকণ্ঠে মহাসড়কে ময়লার স্তূপ বানানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও উত্তরখানের মতো এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী ট্রাকগুলো সময় বা খরচ বাঁচাতে খোলা জায়গা ও জলাভূমিতে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠলেই তা প্রতিবারই অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। ফলে এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধানও আসছে না ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পথ ঢাকা আরিচা মহাসড়ক এখন অনেকটা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। তবে এর দায় নিচ্ছে না কেউ। আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মহাসড়কের অন্তত ১০টি স্থানে গড়ে উঠেছে বর্জ্যের স্তূপ। অথচ এর একেবারে পাশেই রয়েছে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রতিদিন ৮০০-রও বেশি ট্রিপে ৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ফেলে।
কেন এখনো মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা নিজেদের দায় এড়িয়ে সাভার পৌরসভার দিকে আঙুল তোলেন। তবে সাভার পৌরসভাও অভিযোগ অস্বীকার করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মহাসড়কের ধারে পচা বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। কোথাও কোথাও সড়কের ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ময়লা, ফলে পথচারী ও যানবাহনকে দুর্গন্ধ ও বর্জ্য এড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ থেকে মেঘনা ঢোলপ্লাজা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশ্বে অহরহ ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। বিশেষ করে সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মিজমিজি, মদনপুর,কেওঢালা,মোগরাপাড়া, দুধঘাটা, পিরোজপুরসহ কয়েকটি স্থানে মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড় । মহাসড়কের পাশ্বে ময়লা না ফেলার জন্য নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ থেকে বিভিন্ন স্থানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বার্তা টানানো হলেও কেউ মানছেন বরং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার দুর দুরন্ত থেকে বাসা বাড়ির ময়লা আবজর্না ফেলা হচ্ছে মহাসগড়কের পাশ্বে। এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশ্বে যাতে ময়লা না ফেলা হয় সেজন্য একটি সংগঠন উচ্চ আদালতে রীট দায়ের করেন। এ রীটের রায়ে বলা হয়, পরিবেশ রক্ষার জন্য মহাসড়কের পাশে ময়লা আবজর্না ফেলা যাবেনা। এদিকে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে কাঁচপুর থেকে শুরু করে ভুলতা গাউছিয়া বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ময়লা আবজনার স্তুুপ। রাতের আধারে দুর দুরান্ত থেকে ময়লা এনে ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের দ্ইু পাশ্বে ।
সূত্র জানায়, ঢাকা চট্রগ্রাম ও সিলেট মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত আন্তঃজেলা সড়ক যেখানে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার পাশে বর্জ্যের স্তূপ শুধু লেন সংকুচিতই করছে না, আকস্মিক মোড় নেওয়ার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছেÍযা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। দূরপাল্লার বাসচালকেরা প্রায়ই এসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির অভিযোগ করেন, বিশেষ করে রাতের বেলায়। গাড়ির হেডলাইটের আলো বর্জ্যের স্তূপে পড়লে তা রাতেরবেলায় অদ্ভুতভাবে প্রতিফলিত হয় , এতে হাইস্পিড বাস চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়
সূত্র জানায়, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে আমিনবাজার পাওয়ার গ্রিড সাবস্টেশনের সামনে। সেখানে প্রায় ২০০ মিটারজুড়ে রাস্তার ধারে জমে আছে বর্জ্যের স্তূপ। রাতের আঁধারে এসব ময়লা ফেলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বর্জ্যের স্তূপের কিছু অংশ মহাসড়কের ওপর ছড়িয়ে পড়েছে, বাকিটা গিয়ে মিশছে পাশের জলাশয়ে। ফলে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ, ভনভন করছে মাছি, আর এতে আশপাশের বাসিন্দারা পড়েছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ট্রাক চালক আমজাদ সিকদার বলেন, প্রতিদিন রাতে ময়লার ট্রাক আসে, অন্ধকারে বর্জ্য ফেলে চলে যায়। এমনটা চলছে গত চার–পাঁচ মাস ধরে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। শুনেছি প্রভাবশালী মহল ভবিষ্যতে জমি দখলের উদ্দেশ্যে জলাভূমি ভরাটের জন্য এই বর্জ্য ফেলছে।”
আমিনবাজারের বাসিন্দা মহরম আলী বলেন, আমি এখানে ২৮ বছর ধরে থাকি। এমন খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা আগে কখনো দেখিনি। গত চার মাসে বর্জ্যের কারণে আমাদের বসবাসই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। আমরা প্রতিবাদ করলেও সিটি করপোরেশনের হলুদ রঙের ট্রাকগুলো এসে ময়লা ফেলে চলে যায়। প্রতিবার বৃষ্টির পর বর্জ্য থেকে নির্গত তরল পদার্থ মাটির নিচে ও ড্রেনে মিশে যাচ্ছে, যা পানিদূষণের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের জন্য দুর্গন্ধ এখন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের স্কেলম্যান হারুনুর রশিদ জানান ,আমাদের ল্যান্ডফিলে ঢাকা উত্তরের সব এলাকার বর্জ্য নিয়মিতভাবেই ফেলা হয়। প্রতিদিন ৮০০–র বেশি ট্রিপ ময়লা আনলোড করে। বাইরে বর্জ্য ফেলার কোনো কারণ নেই। রাস্তার পাশের ময়লাগুলো সাভার পৌরসভা থেকে আসছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বর্জ্য ফেলা শুধু দুর্গন্ধই ছড়াচ্ছে না, বরং মাটি ও পানি দূষণও বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে আমিনবাজার এলাকায় রাজধানীর সবচেয়ে বড় ল্যান্ডফিল রয়েছে; এর বাইরে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা আশপাশকে যেন ধীরে ধীরে বিষাক্ত এলাকায় পরিণত করছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্জ্য পাশের জলাশয়ে মিশে জলজ প্রাণের ক্ষতি করছে এবং ভূগর্ভস্থ পানিতেও দূষণ ছড়াচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব আরও জটিল হবে চর্মরোগ, ডায়রিয়া, এমনকি দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়ার মতো সমস্যা বাড়বে।তিনি আরও বলেন, “ঢাকার আশপাশের জলাভূমিগুলো প্রাকৃতিকভাবে বন্যারোধে ভূমিকা রাখে। সেখানে ময়লা ফেলা হলে পানি ধারণক্ষমতা কমে যাবে, ফলে শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠবে। মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক হোসেন বলেন, মহাসড়কের দুই পাশে নির্বিচারে ময়লা ফেলা হচ্ছে, অনেক জায়গায় তা গড়িয়ে পড়ছে সড়কের ওপরও। এতে মারাত্মক পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি যাত্রীদের জন্যও পথটিতে চলাচল করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এলাকাজুড়ে তীব্র দুর্গন্ধে টিকে থাকা দায়, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত এখন প্রায় অসহনীয়। তিনি আরও বলেন, এলাকাটিতে কোনো ধরনের তদারকি বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেই। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।