সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা অমানবিক, বর্বর ও চরম নিষ্ঠুরতা। সজ্ঞানে একটি জাতিকে নিধনের চেষ্টা। মার্কিনীরা চাইছে গাজাবাসীকে তাদের ভূখ- থেকে বিতাড়িত করে বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন করতে। বর্তমানে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সক্ষমতা মুসলিম বিশ্বের নেই। তেলের প্রধান উৎপাদক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ। মুসলিম বিশ্ব এখন এককভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না। শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এর সাথে দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াকফ সংশোধনী বিল অহেতুক সমস্যা তৈরি করবে, যা না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই আইনটি মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণœ করবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে গাজা রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদের শুরুতেই ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে গাজাকে রক্ষা করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, রোকেয়া পারভীন জুই, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

এম হুমায়ুন কবির আরও বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে “ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য’, বাক্যটি পুনরায় সংযোজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। এতে দেশের মানুষের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গভীর সংকটে আজ ফিলিস্তিন। রক্তে ভাসছে গাজা। ইসরাইলী গণহত্যার হাত থেকে নারীÑশিশু, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে। জঘন্যতম বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে গাজা এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যুপুরি গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। হাসপাতালে, পথেঘাটে লাশের সারি। চতুর্দিকে মরা মানুষের গন্ধ। গণকবরে পরিণত করা হয়েছে গাজাকে। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পাশে নিয়ে জাতিসংঘ ইসরাইল- ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। তাই মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরো বলেন, গাজায় যখন মুসলিমরা বর্বরোচিতভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, তখনই ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম স্বার্থবিরোধী ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাস করা হয়েছে। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মালিকানা ও অধিকার হরণের অপচেষ্টা হিসেবে বিজেপি সরকার মুসলমানদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের আরেকটি অপচেষ্টা বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও অমুসলিমদের সদস্য করে মুসলিমদের দানকৃত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দখল করার অভিপ্রায় রয়েছে নতুন এই আইনে।