গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এনসিপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর পল্টন ও মিরপুরে পৃথক পৃথক মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের রক্তাক্ত করেছে। সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই গোপালগঞ্জ রক্তাক্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করায় পতিতরা এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জ ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

পল্টন মোড়: জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রস্তুত থেকে আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের রক্তাক্ত করেছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে ঘোষণা করেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা না হলে সারা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা গোপালগঞ্জের অভিমুখে মার্চ করতে বাধ্য হবে। বিকেলে গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এনসিপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর হয়ে নাইটেঙ্গেল মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্ন। যেখানে গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় যোদ্ধাদের উপরে নিকৃষ্ট ও ন্যাক্কারজনক হামলা পরিচালনা করেছে। অতিসত্বর ফ্যাসিবাদের বাকি এ দোসরদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে এবং বাকি দোসরদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে আমরা বাধ্য করবো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে এসেছে বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত না করলে ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। সে কথাই প্রমাণিত হয়েছে। গোপালগঞ্জের হামলা প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখনো নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, বাংলাদেশ এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শেষ চিহ্ন অবশিষ্ট থাকলে এদেশের মানুষকে তারা শান্তিতে বসবাস করতে দেবে না। যে ছাত্রজনতা জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাদের দল এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচি প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেই হয়েছে। তাহলে প্রশাসন কেন ব্যর্থ হলো এমন প্রশ্ন রেখে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এর জবাব দিতে বলেন।

প্রতিবাদ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান ও মো. শামছুর রহমান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে মাওলানা মোশাররফ হোসেন, আমিনুর রহমান, শাহীন আহমেদ খান , মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরী ও বিভিন্ন থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।

মিরপুরে জামায়াতের মিছিল: গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতৃবৃন্দের উপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিরপুরে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবিদ হাসান সিদ্দীকি, ডা. আসাদুজ্জামান কাবুল ও শাহ আলম তুহিন প্রমূখ।

মিছিল শেষে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই গোপালগঞ্জ রক্তাক্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করায় পতিতরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। তাই আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষে গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে দাবানল জ্বলে উঠবে।