শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘুষ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের বক্তব্য জানতে তাকে আগামী বুধবার সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার টিউলিপের ঢাকার ধানমন্ডি ও গুলশান-২ এর ঠিকানায় এ ব্যাপারে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ঢাকার গুলশানের একটি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে ৭১ নম্বর রোডের ১১এ, ১১বি ফ্ল্যাটটি (পুরনো ঠিকানা- ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি) কোনো টাকা পরিশোধ না করেই তিনি নিয়েছেন। রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা গ্রহণে টিউলিপ সহযোগিতা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

এ ব্যাপারে টিউলিপের বক্তব্য জানতে চেয়ে দুদক নোটিসে বলেছে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। উপস্থিত না হলে এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে। টিউলিপ ছাড়াও রাজউকের দুই কর্মকর্তাকে আসামী করে এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। আসামীদের বিরুদ্ধে পরস্পরের ‘যোগসাজশে’ এবং ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে ‘অবৈধ সুবিধা’ নেওয়ার অভিযোগ করা হয় সেখানে।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে ৩০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

টিউলিপ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন।

গত ১৪ এপ্রিল টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভুল কিছু করেছি, এমন কোনো প্রমাণ নেই’। বাংলাদেশ সরকারের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের শিকার’ হওয়ার দাবি করেন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত জানুয়ারিতে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।