# পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়
# টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিতে বলেছিল ‘গ্যাং অব ফোর’
# শাহবাগ ছিল সরকারের তৈরি করা মব
# হাসিনা সংসদে বলেছিল, আমার মনটা শাহবাগে পড়ে থাকে
# শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড ছিল বিরোধীদের রাজনৈতিক আওয়াজ বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে। এরপর নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা বাতিল করে। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এসবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে এক দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল। এই ফ্যাসিস্ট সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন ।
গতকাল রোববার শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জনগণকে নির্যাতন করা, হত্যা করা ও ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করাই ছিল তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) লক্ষ্য। এই দানবীয় শাসকই এক পর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আগে গত বুধবার এই মামলার শেষ সাক্ষী (৫৪তম) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষ হলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য গতকালকের দিন ধার্য করা হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় শুনানি আজ সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস.এইচ. তামিম শুনানি করছেন। সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রসিকিউটররাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, শাহবাগ ছিল সরকারের তৈরি করা মব। এ বিষয়ে হাসিনা সংসদে বলেছিলেন, আমার মনটা শাহবাগে পড়ে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে পুলিশ গুমের মামলা নিতে চাইত না। হাইকোর্ট বলতো, গুমের অভিযোগ পুলিশ তো স্বীকার করছে না। শাপলা চত্ত্বর হত্যাকাণ্ড ছিল বিরোধীদের রাজনৈতিক আওয়াজ বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, মিরপুরে একজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়, তার মাথায় ঝাকরা চুল ছিল। চুলে আগুন লেগে যায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হু-হু করে হাসছিল। আমরা তদন্তের সময় এ বিষয়ে একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম, মাথায় কেন গুলি করা হয়? তারা উত্তর দেয়, ‘মাথায় গুলি না করলে মরতে দেরি হয়।’ এখান থেকেই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময় ছাত্রদের পাখির মত গুলি করার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। মাই লর্ড, আমরা বোঝাতে চাই যে, এই ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি, এটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও প্রাকটিস। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। এই আইনটি সংবিধান কর্তৃক সুরক্ষিত, আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন এই আইনের অধীনে এর আগে পৃথক পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও ১৫ বছরের গুম খুন নির্বাচনের অনিয়ম ও ক্রসফায়ারের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। প্রথমদিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করার পর আগামীকাল পর্যন্ত মূলতবী করা হয়েছে।যুক্তি তর্ক তুলে ধরার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সরকার কিভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারের কি চেহারাটা ছিল, তারা কি ভাবে খুন ও গুমে স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে তুলেছিল। অপরাধী হয়ে উঠেছিল সেটি তুলে এনেছি। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, গত ১৫ বছরে প্রথমত ক্রসফায়ারের নামে হত্যাকান্ড ঘটেছিল, সেই গুলো তুলে ধরেছি।
তিনি জানান, ক্রসফায়ারের আগে গ্রেফতার করা এবং গ্রেফতারের পরে অস্বীকার করা যে আমাকে গ্রেফতার করেনি। আয়না ঘরে বছরের পর বছর আটকে রাখা, এর মধ্যে অনেককে মিথ্যা মামলা দিয়ে চালান দেওয়া, অনেককে গোপন জায়গায় নিয়ে হত্যা করে রাতের আধারে বিভিন্ন নদী নালায় লাশ ফেলে দেওয়া। হত্যার পরে তাদের পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা ঝুলিয়ে দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া অঙ্গহানী করা ও গুমের সেন্টার গুলোতে টর্চার করা, সেখানে ঘুর্নায়মান চেয়ার, ইলেকট্টিক সর্ট, হাতুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা এবং ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হতো।
তাজুল ইসলাম বলেন, একই দিনে অনেক মানুষকে হত্যা করা। এই যে তাদের কর্মকান্ডগুলো ছিল,সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে তারা এধরণের অপকর্মগুলো করেছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। কেবিনেটে অন্যান্যরা এই কাজ গুলো করেছে একটি সিস্টেমের আওতায়। এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছিল। সেই তথ্য গুলো আমরা তুলে ধরেছি।
যুক্তি তর্কের শুরুর দিকে চিফ তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই বিচার হচ্ছে। এই আইনটি সংবিধান কর্তৃক সুরক্ষিত, আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এই আইনের অধীনে এর আগে দুই ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি রায় হয়েছে।
যুক্তিতর্কে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসনের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম। ১/১১ এর সেনা শাসনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের নামে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সেনা সমর্থিত শাসন এনেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়ার আগেও সেনা বাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও না পেরে তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, এর বিচার করার ক্ষমতা এই ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। ওই সময় দেশে হাসিনার রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় ছিলো। আওয়ামী লীগের কর্মপদ্ধতি ও মাইন্ডসেট এই ট্রাইব্যুনালের সামনে আমরা এনেছি। শেখ মুজিবের আমলে রক্ষী বাহিনী দিয়ে নাগরিকদের রাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই কাজটি হাসিনার আমলে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী করেছে গত ১৫ বছরে, আয়নাঘর বানিয়ে। এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি আমরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালে রক্ষী বাহিনী গঠন করে দেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়। ওই সময় এই বাহিনীর মাধ্যমে ৩০ হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে মুজিবের আমলেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মেজর অব. এমএ জলিলের নির্বাচনী ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে ছিনিয়ে ঢাকায় এনে তার প্রতিপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দুর্নীতি, দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশে ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের ঘটনায় অফিশিয়ালি ২৭ হাজার মানুষ মারা যায়। তবে, বাস্তবে এর সংখ্যা আর বেশি। সিরাজ শিকদারকে হত্যার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কোথায় সিরাজ শিকদার!
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময়ও দেশের বাইরে থেকে আসা ত্রাণ লুটপাট ও বিদেশে পাচার ও বিক্রি হয়েছে। যার কারণে দুই আনা লবণের দাম হয়েছিল ৮০ টাকা। ওই সময় অভাবে কারণে মানুষ ডাস্টবিন থেকে কুকুরের সাথে খাবার কাড়াকাড়ি করে খেয়েছে। অথচ, ওই সময় শেখ মুজিবের বাসভবনে তখন ফরাসি সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। তাকে মুজিব জিজ্ঞেস করেন, বাংলা নাকি চাইনিজ খাবার খাবেন। তিনি চাইনিজে খেতে চান। পরে পাশের কামরায় গিয়ে দেখেন, খাসি, চিতল মাছসহ বাংলা খাবারের প্রাচুর্য রয়েছে টেবিলে। তার একটি বইয়ে ওই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। সেই বইয়ে ফালাচি লিখেছেন, ‘আহা! আমি কেন চাইনিজ খেতে রাজি হলাম।’
এ সময় আদালত জানতে চায়, আলোচ্য মামলায় এই ঘটনা দিয়ে আপনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন। জবাবে তাজুল বলেন, এটা আওয়ামী লীগের অপরাধী মনের পরিচায়ক। এটা সামনে না থাকলে তাদের শাসনামলের নমুনা জাতি বুঝতে পারবে না। তাই এই পটভূমি বিচারের সময় বিবেচনায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে। তবে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা তৈরি করে বাকশাল। এ সময় পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখা বই ’স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’; মওদুদ আহমদ এবং মহিউদ্দিন আহমেদের এ বিষয়ে লেখা একাধিক বইয়ের উদ্ধৃতি দেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাধা ছিলো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। তাই পিলখানা হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। এটা ছিলো শেখ হাসিনার ফ্যাসিজম কায়েমের প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, যাতে ইচ্ছামত নির্বাচন করা যায়। দ্বিতীয় ধাপে শুরু হয় জুডিশিয়াল কিলিং, এর মাধ্যমে আইন পরিবর্তন করে ফাঁসি দেওয়া হয়। হাসিনাকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘আপনি (একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের) বিচার করেন। হাসিনা জবাব দেন, বিচার করার জন্য প্রমাণ কোথায় খুঁজে পাবো। প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, প্রমাণের ব্যবস্থা আমি করবো।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, বিচারকরা যা কিছু তা করবে, এর একটা নিয়ন্ত্রণ বা জবাবদিহিতা থাকা দরকার। আমি দেওয়া মনে করি এর জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকা দরকার।
তাজুল বলেন, এ ধরনের একটা কাউন্সিল আছে, যেটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের একজন সদস্যও যদি আইন ভঙ্গ করেন, তবে তখন কী হবে।
ক্রসফায়ারের নির্মমতা বর্ণনা করতে গিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, মিরপুরে একজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়, তার মাথায় ঝাকরা চুল ছিল। চুলে আগুন লেগে যায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হু-হু করে হাসছিল। আমরা তদন্তের সময় এ বিষয়ে একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম, মাথায় কেন গুলি করা হয়? তারা উত্তর দেয়, ‘মাথায় গুলি না করলে মরতে দেরি হয়।’ এখান থেকেই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময় ছাত্রদের পাখির মত গুলি করার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। মাই লর্ড, আমরা বোঝাতে চাই যে, এই ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি, এটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও প্রাকটিস।
গুমের বিষয়ে তাজুল বলেন, তখন পুলিশ গুমের মামলা নিতে চাইত না। হাইকোর্ট বলতো, গুমের অভিযোগ পুলিশ তো স্বীকার করছে না।
তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় কথা না শুনলে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন ‘গ্যাং অব ফোর’ (ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক)। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কোর কমিটির মিটিং হতো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায়। এছাড়া জুনায়েদ আহমেদ পলককে ইন্টারনেট বন্ধের সরাসরি নির্দেশও দেয়া হয়। তবে ‘গ্যাং অব ফোর’ পলককে সরাসরি নির্দেশ দেন যদি আন্দোলনে টিভি চ্যানেলগুলো সরকারের কথামত না চলে, তবে যেন তা বন্ধ করে দেয়া হয়।