সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে গতকাল রবিবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা। বিক্ষোভ শেষে তারা তিনজন উপদেষ্টার কাছে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন কর্মচারীরা। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

এরপর তারা মিছিল নিয়ে খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের কাছে স্মারকলিপি দেন। পরে তারা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি দেন। এরপর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। কিন্তু তিনি দপ্তরে ছিলেন না। দুপুরের দিকে তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

বেলা ১২টার দিকে সচিবালয়ের বাদাম তলায় জমায়েত হয়ে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যে কর্মসূচি দেবো, তা সারা দেশে একযোগে পালন করা হবে।” তিনি আরও বলেন,আমাদের দাবি যদি মানা না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠিন দাবি যুক্ত করে একযোগে আন্দোলন করবো।ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ঐক্য ফোরামের নেতারা সরকারের তিন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

নুরুল ইসলাম জানান,স্মারকলিপি দেওয়ার পর আমরা ভূমি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশে এলে তার সঙ্গে কথা বলে একটা ফলাফল দেবেন। রবিবারের মধ্যে আমাদের একটি পজিটিভ রেজাল্ট দেওয়ার কথা। তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” বাতিল না হলে সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই আন্দোলন আরও কঠিন দাবি যুক্ত করে একযোগে চলবে।

এদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন অধ্যাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের কর্মসূচি গ্রহণ ও অংশগ্রহণের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।এছাড়া, সংশোধিত আইনে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা এবং শাস্তির বিধান রাখা হতে পারে।

এদিকে সরকারি চাকরিজীবী সচিবালয়ে আন্দোলকারীদের ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ করতে বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বড় আন্দোলনে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। রোববার সচিবালয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় সচিবালয়ের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি নিয়ে কর্মচারীদের উদ্বেগের কথা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের কাছে স্মারকলিপি দেন কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা নূরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। পরে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। উপদেষ্টার সামনে দেওয়া বক্তব্যে আইনের বিভিন্ন ‘নিবর্তনমূলক ও দমনমূলক’ দিক তুলে ধরেন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা।

বৈঠক শেষে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, এখানে কিছু প্রভিশন আছে যেগুলো অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা আছে। আপনাদের অবস্থান হচ্ছে এটা বাতিল করে দিতে হবে। বাতিল করার দাবি জানিয়ে আপনাদের যে বক্তব্য, সেটা উপদেষ্টা পরিষদে আমি আলাপ করব।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের কয়েকটি ধারা অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এখানে (অধ্যাদেশে) কিছু প্রভিশন (ধারা) আছে, যেগুলোর অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি এটি নিয়ে আলোচনা করব।’

সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের (কর্মচারী) যে অবস্থান, তা হলো, এটি বাতিল করে দিতে হবে। এটা একটা অবস্থান। কিন্তু আপনারা একটা জিনিস মনে রাখবেন, আর একটা বিষয় হতে পারে এই অধ্যাদেশ যে অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেগুলোকে অ্যাড্রেস করা যায় কি না। সেটাও আপনারা একটু মাথায় রাখবেন।’

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘এটার যে একটা ত্রুটি আছে, সেটা সম্পর্কে কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ সচেতন। আমি তো আর কিছু বলতে পারি না, আমি আপনাদের বাতিল করার দাবি উপদেষ্টা পরিষদে জানাব। আপনারা ভেবে দেখবেন, এই অধ্যাদেশ রেখে কী কী সেফ গার্ডস ইন্ট্রোডিউস করলে এটা গ্রহণযোগ্য হবে।