যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। ইতিহাস, শোক ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই দিনে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতের স্মরণে দিনটি ইসলামের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও আশুরার দিন অসংখ্য ঘটনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে।
গত রোববার সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়। দিনটি উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান, নফল রোজা ও ইবাদতে মগ্ন ছিলেন মুসলমানরা। এ দিন উপলক্ষ্যে সারাদেশে মসজিদ ও মাদরাসাগুলোতে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে বের হয়েছে ১০ মহররমের প্রধান তাজিয়া মিছিল।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রোববার বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন এবং সভাপতিত্ব করেছেন ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে অনেকে রোযা পালন করেছেন। আশুরা উপলক্ষ্যে রোযা রাখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, আশুরার রোজায় পূর্ব বছরের গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার আগের দিন (৯ মহররম) ও আশুরার দিন (১০ মহররম), অথবা আশুরার দিন ও পরের দিন (১১ মহররম) রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
দিনটি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে। আসুন এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্যকে ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলে বেশি বেশি নেক আমল করি। সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে আমি মুসলিম উম্মা’র ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করছি।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি পালিত হয়েছে। দৈনিক সংবাদপত্রে ছুটি পালিত হওয়ায় গতকাল সোমবার কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি।
খুলনায় পবিত্র আশুরা পালিত
খুলনা ব্যুরো : পবিত্র মহররম উপলক্ষে আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতানী ট্রাষ্ট আয়োজিত ১০ দিন ব্যাপী শোক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগের এই দিনে ইরাকের কারবালায় বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)র প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী-সাথী সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১ হতে ১০ই মহররম পর্যন্ত আলোচনা করেন ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী এবং সমাপনী দিনে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর পবিত্র শাহাদাত স্মরণে আশুরার শোক মিছিল নগরীর আলতাপোল লেনস্থ আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতানী ইমামবাড়ি হতে বের হয়।
শোক মিছিলপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী। তিনি বলেন, কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনায় মুসলমানদের জন্য ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে। কারবালার ঘটনা মুসলমানদেরকে মিথ্যার সাথে আপোস না করা এবং সত্যের পতাকাকে সমুন্নত রাখার চেতনাকে জাগ্রত রাখার শিক্ষা প্রদান করে। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা এবং ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গীদের শাহাদাতের পর শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও এর গুরুত্ব ও মর্যাদা এতটুকুও কমেনি বরং সময়ের সাথে সাথে আশুরার চেতনা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
বিশ্ব জায়নবাদকে অন্যায়ের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার সহযোগী গোষ্ঠী বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রতি ঘৃণার বিষয়টি সব জাতি এবং সরকারের কথা ও কাজে প্রকাশ পেতে হবে এবং জল্লাদদের জন্য ক্ষেত্র সংকুচিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনের ইস্পাত-কঠিন প্রতিরোধ এবং গাজার ধৈর্যশীল ও নির্যাতিত মানুষদের প্রতি অবশ্যই সর্বতোভাবে সমর্থন দিতে হবে। বিশ্ব হায়েনা ইসরাইলের নৃশংসতা রুখে দিতে হোসাইনী চেতনাকে সামনে রেখে বিশ্বমুসলিমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মুসলমান রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে এলে বিশ্বসন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল এক মুহূর্তও টিকবে না।
আলোচনা শেষে একটি শোক মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ইমাম বাড়িতে এসে শেষ হয়। এ শোক মিছিলে খুলনা ও অন্যান্য এলাকা থেকে আগত শিয়া মুসলমান নারী ও পুরুষ অংশ গ্রহণ করেন।