গণভোট অনুষ্ঠান কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আগে আইন তৈরি করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। এদিন সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণভোটের প্রস্তুতি জানতে চাইলে সিইসি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। অপরদিকে ইসিকে নতজানু না হয়ে শক্ত হওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

সিইসি বলেন, আমাদের রেফারেন্ডামের (গণভোট) কথা আসছে। কিভাবে গণভোট কীভাবে করবো না করবো, তা নিয়ে তো আমাকে আগে আইনটা করতে হবে।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণভোট করেছিলেন মার্শাল প্রিপারেশনের আন্ডারে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একটা আইন করে করেছিলেন। গণভোট কীভাবে হবে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন। অনেকে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আইনটা হওয়ার পর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো।

সিইসি বলেন, গণভোট কীভাবে এ বিষয়ে জনতে চাওয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের গণভোটের আইনটা আপনাদের মনে আছে। এখন গণভোটের জন্য আইনটা তো আগে হতে হবে। আইন হলে সেই আলোকে আমরা কাজ করতে পারবো।

এ পর্বে সকালে সংলাপে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বিকেলে অংশ নেয় বিএনপিসহ মোট পাঁচটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি ছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও নতুন দল বাসদ মার্কসবাদী আলোচনায় অংশ নেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, আমরা আপনাদেরকে সব সহযোগিতা করব। আমরা চাই আপনারা শক্ত থাকেন, আপনারা সিদ্ধান্তগুলো নেন। ইউ হ্যাভ দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য অথোরিটি। সরকার দিয়েছে, সংবিধান আপনাদেরকে সেই অথোরিটি দিয়েছে। আপনারা এই নির্বাচনে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে, কোনো রিটার্নিং অফিসার, কোনো অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের বাইরে হবে না।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মত পরিস্থিতি যে এখন নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে কোনো সুবিধা নেই, যেটা অতীতে আমরা দেখেছি। সরকারের কাছে নতজানু হয়ে ইলেকশন কমিশন থাকবে–এভাবে কোনো দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারবে না।”

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে কমিটেড, সেই ভাবেই দায়িত্ব পালন করব। সুন্দর নির্বাচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ভূমিকা রাখবেন সেই আশা করি।”

ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, “আমি নির্দিষ্ট করে বলছি, এই যে ৬৪ জেলায় আপনারা সরকার থেকে আপনারা ভাড়া করে নিয়ে আসেন... তাদেরকে রিটার্নিং অফিসার বানান।... আপনাদের বড় ম্যানপাওয়ার নেই, তবে এতটুকু ম্যানপাওয়ার তো আছে। আপনারা একবার সাহস করে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে, রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশন থেকে থাকবে, অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের কমিশনের কর্মকর্তাদের থেকে হবে। দেখবেন এই একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, এই পয়েন্টটা আমি জোর দিয়ে কেন বলছি, দেখেন অতীতে আমরা দেখেছি এবং আমি পাবলিকলি বলেছি এটা কিন্তু পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কম্পিউটারে চারটা বাটন আছে। একটা হচ্ছে ডিসি, একটা হচ্ছে এসপি, একটা হচ্ছে টিএনও আরেকটা হচ্ছে ওসি। কম্পিউটারের বাটন চারটা টেপা হয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী ফলাফল প্রিন্ট আউট হয়ে বের হয়ে আসে।

মঈন খান বলেন, এটা থেকে, এই পদ্ধতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং এটা বের হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়... আপনারা এই নির্বাচনে এই সিদ্ধান্তটা নেন যে, কোনো রিটার্নিং অফিসার, কোনো অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসার আপনাদের নির্বাচন কমিশনের বাইরে হবে না। আমি বিশ্বাস করি, এতে নির্বাচনে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে।

এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আপনারা করেন, আমরা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একটা সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা আছেন, সবাই কথা বলবেন এই বিষয়ে।

বাংলাদেশ ‘ক্রান্তিকাল পার করছে’ মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, এই সময় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিয়মকানুন মেনে নির্বাচন করব। নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলব।”

প্রার্থীর অঙ্গীকানামার বিষয়ে তিনি বলেন, অঙ্গিকানামা এবার দিতে হবে, এটা আগে ছিল না। ইসি নিয়ম কানুনের বেড়াজাল যত বাড়াবে, তত বিষয়টি জটিল হবে।

ধর্মকে যাতে কোথাও ‘রাজনৈতিকভাবে’ ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ‘লক্ষ্য রাখতে’ বলেন মঈন খান।

এনসিপির মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, প্রতীক কিন্তু একজনের পরিচয়। নিজের শরীর আছে, কিন্তু কেউ অন্যের প্যান্ট, জামা পরে ইলেকশনে যায়, তাহলে মুখ দেখে চেনা যাবে কে? তাই যারা রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবৃন্দ রয়েছেন, দীর্ঘ সময় পরে আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে নিজের প্রতীকে নির্বাচন করে নিজের জায়গায় নিজের পরিচয় জানানোর। এই সুযোগটি আমরা হারাবো নাÑএটা আমাদের বড় পাওয়া”।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের এই ইলেকশনের বড় একটি বিষয় হচ্ছে গণভোট। গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে? কিভাবে আপনারা এটা বাস্তবায়ন করবেন? এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আমরা কবে পাব? কবে আমরা প্রচারণা করতে পারব সে বিষয়ে জানাবেন। আমরাও কিছু কলাবোরেশন কাজ করতে পারবো বলে আশা করি। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থান দেখালে দলটির পক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

সব দল মাঠে নামলে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানিয়ে মূখ্য সমন্বয়ক বলেন, “ইলেকশন কমিশন সব দলের উপরে থাকবে। ইসি যদি তার স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রাখতে পারে এবং যদি তার দায়বদ্ধতা সংবিধানের কাছে থাকে, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে না থাকে; তাহলে আমরা শতভাগ ইসি যে কোঅপারেশন চাওয়া হবে, তা দেবো। এবং ইলেকশন কমিশন যেভাবে ইলেকশনকে দিকনির্দেশনা দেবে, আমরাও সেভাবেই মেনে চলার চেষ্টা করবো।