রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির পৃথক ছয় মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক দুই বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেয়। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আদেশ দেয় ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি বলেন, তিন মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব মামলার একটিতে শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, আরেকটিতে সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন এবং অপর মামমলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন আসামী। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বিচারক আগামী ১১ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্লট দুর্নীতির আরও তিন মামলায় শেখ রেহেনা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয় ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম।

এ বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, এসব মামলায় শেখ রেহানা, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন; আজমিনা, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন এবং রাদওয়ান, টিউলিপ ও শেখ হাসিনা ১৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। তারা আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এসব মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ অগাস্ট দিন ঠিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। পরদিন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এই ছয় মামলাতেই শেখ হাসিনাকে আসামী করেছে দুদক। অন্যদেরও কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামী। সব মিলিয়ে ছয় মামলার আসামীর সংখ্যা ২৩।

শেখ পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন আসামীর তালিকায় রয়েছেন, তারা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

এসব মামলায় দুদক অভিযোগ করেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।

এর আগে গত ২০ জুলাই পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আদালতে বদলি হয়।

দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত এপ্রিলে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। তিনটি মামলায় তাদের ছাড়াও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামী।