আজ ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার । ২০২৪ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন রকমের। সদ্য গঠিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা শুরু করে। তারা প্রথমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, মধুর কেন্টিন কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার ও শাহবাগ কেন্দ্রীক কর্মসূচি পালন শুরু করে।

জুলাই মাসে পরিকল্পিত আন্দোলন শুরু হলেও আন্দোলনের বীজ বুনে ছাত্ররা এর আগে। ২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি চাকরির নিয়োগ ব্যবস্থায় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ঘোষণার পরপরই, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের জন্য ৫৬% চাকরি সংরক্ষণ করার সুবিধা দেয়ার কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও শিক্ষার্থীরা ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে অস্বীকার করে এবং কোটা বাতিলের নতুন নির্বাহী আদেশের দাবি জানায়। ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। তবে ঈদুল আযহা উদযাপনের কারণে বিক্ষোভ শান্ত হলেও বিরতির পর তা আবার শুরু হয়।

এক সাক্ষাতকারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ৫ জুন কোর্টের রায়ের পরে আমরা দেখলাম যে এটা শিক্ষার্থীদের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল, তখন সবাই এর সংস্কার চেয়েছিল, বাতিল নয়। কিন্তু সরকার নিজে থেকে সকল কোটা বাতিল ঘোষণা করে। কিন্তু ২০২৪-এ এসে একটি একতরফা নির্বাচনের পর কোর্টের মাধ্যমে আবার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। সেটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাস্থা, ক্ষোভ, হতাশা এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করে। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ছিল টালমাটাল। আমরা যখন দেখলাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ আছে তখন সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে গিয়ে কথা বললাম। সবাই এ নিয়ে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইলো। এ প্রেক্ষিতে আমরা সন্ধ্যায় সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে একটি কর্মসূচি দেই। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে সেদিন এর প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। প্রথম দাবিটি ছিল ২০১৮ সালের যে দাবি তা পুনর্বহাল করা।

আন্দোলনের শুরু ও বিস্তৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের তিন দিনের মধ্যে ঈদের বন্ধ চলে আসে। বন্ধের আগে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়ে এসেছিলাম। প্রাথমিক দাবি ছিল যেন রায় স্থগিত করে পরিপত্র বহাল করার। ঈদের বন্ধ থাকায় আমরা একটা আল্টিমেটাম দেই ৩০ জুন পর্যন্ত। যাতে এই সময়টার মধ্যে সরকার একটা ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এ কারণে আমরা এই সময়টাতে আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নিজেদের সংগঠিত করি।’

‘এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা অনলাইনে মিটিং করি, ফেসবুকে ক্যাম্পেইন করি। আমরা সকলের সাথে একটা নেটওয়ার্ক স্থাপন করি। যখন আমরা দেখলাম সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোন কিছু করা হলো না তখন ১ জুলাই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে প্রথমবারের মতো কর্মসূচি পালন করি