# মিরপুরে ব্যবসায়ীকে গুলী করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই

# উত্তরায় র‌্যাবের পোশাক পরে কোটি টাকা ছিনতাই

র‌্যাবের কটি পরে রাজধানীর উত্তরায় প্রকাশ্যে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোনো কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। ঘটনার পর চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন- উত্তরায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় র‌্যাব পরিচয়ে টাকা ছিনতাই, নাকি প্রকৃত র‌্যাব সদস্যরা জড়িত এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর উদ্ধার করা যায়নি ছিনতাই হওয়া টাকা। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি ও সিআইডি ঘটনা তদন্ত করছে।

তবে সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলেছে, অন্যান্য অপরাধ কমে আসলেও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। এ ঘটনাগুলো পুলিশকেও ভাবিয়ে তুলছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার করা হয়েছে লুন্ঠিত টাকা ও মালামাল।

উত্তরায় র‌্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’র ডিস্ট্রিবিউটরের এক প্রতিনিধির কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গতশনিবার সকাল ৯টার দিকে। এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ভুক্তভোগী মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি কালো মাইক্রোবাস মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে। এরপর ওই মাইক্রোবাস থেকে র‌্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন ব্যক্তি বেরিয়ে ভুক্তভোগীকে ধরার চেষ্টা করে। তখন ভুক্তভোগী দৌড় দিলে র‌্যাবের পোশাক পরা ব্যক্তিরাও পেছনে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা তাকে ধরে ফেলে। পরে ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ ঘটনাটিকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে গতকাল রোববার বিকেলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় প্রকৃত র‌্যাব সদস্যরা জড়িত কিনা তা নিয়ে কিছুটা রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। যে হায়েস গাড়িটিতে ভিকটিমকে টাকাসহ তোলা হয় সেটি র‌্যাবের গাড়ি কিনা সেসব ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইউনিফর্ম ছাড়া র‌্যাবের লোগো লাগানো কটি পরেও র‌্যাব সদস্যরা ডিউটি করে। সে ক্ষেত্রে ঘটনার সময় র‌্যাবের কোন ইউনিটের কোন কোন সদস্য কোথায় ডিউটিতে থাকার কথা তাদের রোস্টার ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

জানা গেছে, আলোচিত কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুরো শহর জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সড়কপথ ও রেলপথে যারা ঢাকায় ফিরেন তারা অনেকটা আতঙ্ক নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছান। কারণ শহরের বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরে পেশাদার ছিনতাইকারীরা ওত পেতে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা যাত্রী ও পথচারীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে। অস্ত্রধারী এসব ছিনতাইকারীদের বাধা দিলেই ছুরিকাঘাত করে। শুধু বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে নয় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ছিনতাইকারী বেড়ে যাওয়াতে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতেও এখন ছিনতাইকারীরা ওত পেতে থাকে। রাজধানীর ৫০টি থানার সবকটি এলাকাতে এখন ছিনতাই আতঙ্ক। প্রতিরাতেই অহরহ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হন। বেশির ভাগ মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়েও পুলিশের সহযোগিতা নিতে চান না। ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে শুধুমাত্র থানায় হারানো জিডি করেন। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দেন। যারা অভিযোগ দেন তাদের বিষয়টি থানায় রেকর্ডেড থাকে। তাই ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা ও অভিযোগ না দেয়াতে প্রকৃতপক্ষে ঢাকায় কি পরিমাণ ছিনতাই হয় তার পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ঢাকায় কি পরিমাণ ছিনতাই স্পট আছে তার হিসাব পাওয়া গেছে।

র‌্যাব সদর দপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় তারা ২৭৯টি ছিনতাই স্পট শনাক্ত করেছে। এরমধ্যে র‌্যাব-১ এর আওতাধীন এলাকায় ৪১টি, র‌্যাব-২ এলাকায় ৭৯টি, র‌্যাব-৩ এলাকায় ২৪টি, র‌্যাব-৪ এলাকায় ৬২টি ও র‌্যাব-১০ এর আওতাধীন এলাকায় ৭৩টি স্পট রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের থানা, গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তর বলছে, ছিনতাই প্রতিরোধে গুরুত্ব সহকারে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ছিনতাই স্পট শনাক্ত, পেট্রোলিং করা হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে রাজধানী এবং এর আশপাশে ৪৩২টি ছিনতাইয়ের স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এই স্পটগুলোতে কমপক্ষে ৯৭৯ জন ছিনতাইকারী সক্রিয় এবং তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ফৌজদারি মামলার আসামী। গত ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৯টায় রাজধানীর মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হাফেজ কামরুল হাসান ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এসময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইলফোন ও সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পথচারীরা মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে মারা যান কামরুল। পরে এ ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কিছুদিন আগে মগবাজারের একটি গলিতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এক যুবক। বাধা দেওয়ায় তাকে একাধিকবার চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। ঘটনার সময়ের একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছিনতাইয়ের এই ঘটনা ঘটে গত ১৮ মে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটের দিকে। ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে একটি নির্জন গলি ধরে হাঁটছিলেন। ঠিক সেই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সাদা মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবকের মধ্যে দু’জন হঠাৎ তার দিকে এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী যুবক বাধা দিতে গেলে, মুখে মাস্ক পরা ছিনতাইকারীরা সঙ্গে থাকা চাপাতি বের করে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। চারপাশে কুকুরের চিৎকারও শোনা যায় ওই সময়। ছিনতাইকারীরা ব্যাগ নিয়ে পালাতে চাইলে যুবকটি মোটরসাইকেলের সামনের চাকা ধরে ব্যাগটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানাতে থাকেন। এতে ছিনতাইকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। মোটরসাইকেল থেকে নেমে আবারও যুবকটির ওপর চাপাতি নিয়ে হামলা চালান তারা। বিষয়টি নিয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু জানান, পুলিশ ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যালোচনা করে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মালামাল উদ্ধার করেছে।

গত ২৭ মে মিরপুরে দিন-দুপুরে গুলী করে এক ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুলীতে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক মো. মাহমুদুল ইসলাম (৫৫) গুরুতর আহত হন। গুলিবিদ্ধ মাহমুদুল মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর লেনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে। আহত মাহমুদুল জানান, বাসা থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে মানি এক্সচেঞ্জ অফিসে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় স্টেডিয়ামের সুইমিংপুল ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি আব্দুল বাতেন সড়কে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলযোগে ছয়জন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে। তারা তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় কোমরের বাম পাশে গুলি করে। পরে তার কাছে থাকা ২২ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি আরও জানান, স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

এরআগে বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলী করে তার কাছে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায় তিনটি মোটরসাইকেলে করে একদল দৃর্বৃত্ত রাস্তায় আক্রমণ করে ব্যবসায়ীকে গুলী করে স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। একাধিক সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। এসময় তার পায়ে এবং পিঠে ধারাল অস্ত্র দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়।

সর্বশেষ শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ডেমরা স্টাফ কোয়াটার এলাকায় সাগর আহমেদ (৩২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আহত সাগরের ভাই আল-আমিন বলেন, রাতে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের রাস্তায় দু-তিনজন দুর্বৃত্ত আমার ভাইয়ের গতিরোধ করে সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ভাইয়ের ডান হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর জখম হয়। পরে আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।