সরকারী দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছেই। এর বেশিরভাগই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। পুলিশ সদর দফতরের তালিকায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের মধ্যে শুধু নীচের পর্যায়ের সদস্যরাই নন, আছেন শীর্ষ পর্যায়ের অতিরিক্ত আইজিপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারগণও (এসপি)। এসব মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের স্মরণে প্রতিবছর পালন করা হয় ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’। কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী সদস্যদের স্মরণ করা অনুষ্ঠানে বিগত বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশনাও কাজে না আসায় দায়িত্ব পালনকালীন মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। এ অবস্থায় গত ২৯ জুন পুলিশ সদর দফতরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে ২০ দফা সম্বলিত একটি নির্দেশনা পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়, যাতে বলা হয়েছে সরকারী দায়িত্ব পালনকালে ব্যবহার করতে হবে ৮ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম। মানতে হবে নানা বারণও।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে সড়কে অস্বাভাবিক যান চলাচল ও অসতর্কভাবে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে তারা হতাহত হচ্ছেন। এমন অবস্থা বিবেচনা করে সড়ক ও নৌপথে দায়িত্ব পালনকালে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি ২০ দফা নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি জারি করে পুলিশ সদর দফতর। সূত্র আশা করছে, এই নির্দেশনার ফলে দায়িত্ব পালনকালীন মৃত্যুর হার কমবে।

পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বিভিন্ন পর্যায়ের ৯ শত ৪৩ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পরিসংখ্যানে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজি পর্যন্ত রয়েছেন।

পুলিশ সদর দফতর সুত্র জানায়, ২০১৯ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৭৯ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজি একজন, পুলিশ সুপার (এসপি) একজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার একজন, ইন্সপেক্টর/টিআই ১২ জন, সাব-ইন্সপেক্টর/ টিএসআই ২৫ জন, এএসআই/এটিএসআই ২৮ জন, নায়েক ছয় জন ও কনস্টেবল ১০৪ জন।

২০২০ সালে জীবন উৎসর্গকারী ২০৮জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) তিনজন, সহকারী পুলিশ সুপার দুইজন, ইন্সপেক্টর/টিআই ১৬ জন, সাব-ইন্সপেক্টর/ টিএসআই ৩৬ জন, এএসআই/এটিএসআই ১৬ জন, নায়েক ছয় জন ও কনস্টেবল ১২৯ জন।

২০২১ সালে দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গ করেন ১৩৮ জন পুলিশ সদস্য।

২০২২ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১২১ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ইন্সপেক্টর/টিআই সাত জন, সাব-ইন্সপেক্টর/টিএসআই ২২ জন, এএসআই/এটিএসআই ১৬ জন, নায়েক পাঁচ জন ও কনস্টেবল ৭১ জন।

২০২৩ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৩৪ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিনজন, সহকারী পুলিশ সুপার একজন, ইন্সপেক্টর/টিআই ৯ জন, সাব-ইন্সপেক্টর/ টিএসআই ১৩ জন, এএসআই/এটিএসআই ১৬ জন, নায়েক চারজন ও কনস্টেবল ৮৮ জন।

২০২৪ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৬৩ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি একজন, পুলিশ সুপার (এসপি) একজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, ইন্সপেক্টর/টিআই ৭ জন, সাব-ইন্সপেক্টর/ টিএসআই ৩৭ জন, এএসআই/এটিএসআই ৩২ জন, নায়েক চারজন ও কনস্টেবল ৮০ জন।

সুত্র জানায়, প্রতি বছরই কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যগণকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। এদিন জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে ডিউটির সময় নিজের জীবন ঝুঁকিতে না ফেলে এমন অবস্থানে দাঁড়াতে হবে যেখান থেকে যানবাহনকে স্পষ্টভাবে সংকেত দেওয়া যায়। অর্থাৎ রাস্তায় বা যানবাহন চলাচলের মাঝে না গিয়ে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে সংকেত প্রদান করতে হবে। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা সরঞ্জাম হাই-ভিজিবিলিটি জ্যাকেট, রিফ্লেকটিভ ভেস্ট গ্লাভস ও হাত সুরক্ষা, প্রতিরক্ষামূলক বুট, সিগন্যাল লাইট বা ব্যাটন, শোল্ডার লাইট, মাস্ক ও চশমা (ধুলা বা ধোঁয়া রোধে), রেইন কোট বা আবহাওয়া উপযোগী পোশাক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া চেকপোষ্টকালে বডিওর্ন ক্যামেরা, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, হ্যান্ড হেল্ড ডিটেক্টর ব্যবহার করে চেকপোস্ট পরিচালনা, সড়কে গাড়ি থামানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্বে থেকে দৃশ্যমান হ্যান্ড সিগনাল (থামুন/স্টপ ইত্যাদি) দিয়ে গাড়ি থামাতে হবে। এছাড়া চেকপোস্টকালে স্পষ্ট সাইনবোর্ড, ব্যারিকেড, কোণ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।