বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদেশের কয়েক হাজার শিক্ষক ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমবেত হন। এ সময় পল্টন থেকে হাইকোর্ট ও শাহবাগ অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।

সমাবেশে শিক্ষক নেতারা জানান, পূর্ববর্তী সরকার বারবার আলোচনার পরও তাদের দাবি মেনে নেয়নি। রাজধানীতে ৪৪ দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিও ফলপ্রসূ হয়নি। এবার প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয়ক নিয়োগ করে আগেভাগেই বাস রিজার্ভসহ সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন তারা। প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অংশ নেন। সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন। সমাবেশ থেকে শিক্ষকরা তাদের দাবি পূরণে এক মাসের আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক ও আশ্বাস: সমাবেশ চলাকালে দুপুরে ১২ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি দল শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারের সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় সার্বজনীন বদলির জন্য ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুপুর দেড়টার একটু আগে শুরু হওয়া এ সভা শেষ হয় পৌনে ৩টার দিকে। সভা সূত্র জানায়, সার্বজনীন বদলি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানকে; যেখানে সদস্য সচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (মাধ্যমিক-২) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী। এছাড়াও সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে সদস্য রাখা হয়েছে। সভা সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বজনীন বদলি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়; যা আলোচনা করে শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ে পরে জমা দেবেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়, বাড়ি ভাড়া টাকা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে।

দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি: সরকার দাবি না মানলে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জাতীয়করণসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী এ কর্মসূচির কথা বলেন। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের সঙ্গে দেখা করে এসে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তারা বলেছে, সব দাবি একবারে পূর্ণ করা সম্ভব নয়। এই দাবিগুলো পূরণে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে। আজিজী বলেন, আমরা প্রস্তাব রেখেছি আমাদের বাড়ি ভাড়া পার্সেন্টেজ হিসেবে বাড়াতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করার কথা বলেছে, আমরা এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলিনি। আমরা বাড়ি ভাড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।

বাড়িভাড়া-চিকিৎসাভাতা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব: এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষকরা এখন যে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা পান, তা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকনেতা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়মে মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতাংশ অনুযায়ী বাড়িভাড়া দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবে তারা ‘খুশি নন’।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি, সরকারি চাকরিজীবীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় কর্মরত থাকলে বাড়িভাড়া হিসাবে মূল বেতনের ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত টাকা পেয়ে থাকেন। জেলা শহরে মূল বেতনের ওপর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ৩৫ থেকে ৫৫ শতাংশ পান। একইভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও বাড়িভাড়া ভাতা দিতে হবে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৭টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী।