টঙ্গীতে নিখোঁজ হওয়া নারীকে "ম্যানহোল"–এ পড়ার যে প্রচার চলছে, সেটি প্রকৃতপক্ষে সত্যের বিকৃতি। ঘটনাস্থল এবং আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কোনো ম্যানহোল ছিল না। প্রকৃত ঘটনা হলো, বহুল আলোচিত, ব্যর্থ এবং অসম্পূর্ণ বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের অরক্ষিত খোলা গভীর ড্রেনে পড়েই ওই নারী নিখোঁজ হন।
মঙ্গলবার (২৯জুলাই) সকালে, ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার একটি বিল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার লাশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন টঙ্গী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাইদুল ইসলাম বলেন, “যে ম্যানহোলে পড়ে ওই নারী মারা গেছেন বলে বলা হচ্ছে, সেটি প্রকৃতপক্ষে আমাদের সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নয়। ওই ড্রেনটি বিআরটি প্রকল্পের অধীনে নির্মিত। প্রকল্পটি এখনও আমাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়নি। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও খোলা রেখেই ফেলে রাখার জন্য দায়ী মূলত বিআরটি কর্তৃপক্ষ।”
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট স্রোতে মহাসড়কের পাশে থাকা উন্মুক্ত ওই গভীর ড্রেনে পড়ে যান ওই নারী। আশপাশে কোনো ব্যারিকেড, সাইনবোর্ড বা সতর্কতা ছিল না। এমনকি প্রকল্পের সেই অংশটুকু এখনো সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি, ফলে এই দুর্ঘটনার দায় কেউ নিচ্ছে না।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—কেন প্রকৃত ঘটনাস্থল ‘বিআরটির খোলা ড্রেন’ বলার বদলে ‘ম্যানহোল’ বলা হচ্ছে? এ কি সচেতনভাবে প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা? নাকি ম্যানহোল আর ড্রেনের ‘স্লাব’–এর পার্থক্য না জানার কারণে এমন বিভ্রান্তিকর প্রচার চলছে?
বিআরটি প্রকল্পটি ছিল পাঁচ বছরের পরিকল্পনা। কিন্তু বাস্তবে এক যুগ পেরিয়েও এটি সম্পূর্ণ হয়নি। বরং এ প্রকল্প এখন দুর্নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের ভাষায়—এই প্রকল্প এখন "নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের খাওয়ার মাঠ"। সময়ে সময়ে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে, অনুমানভিত্তিক ব্যয় বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা প্রকল্পের বাইরে লুটে নেওয়া হয়েছে। অথচ খেয়ে-দেয়ে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা দেখেই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এর ব্যর্থতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে এলাকাবাসীর ক্ষোভ—এই পতিত প্রকল্পের দায় নিচ্ছে না কেউ, কিন্তু এর মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যে ড্রেনটির মুখ ছিল উন্মুক্ত, যেখানে কোনো সুরক্ষা ছিল না—সেখানেই প্রাণ গেলো একজন নারীর। সেই শোকের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভও বাড়ছে, কারণ মানুষ বুঝে যাচ্ছে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতাই এই মৃত্যুর মূল কারণ।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে মহাসড়কের সব খোলা ড্রেন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ঢাকনা বসাতে হবে এবং বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে এ মৃত্যু কেবল শুরু, এর পুনরাবৃত্তি থামানো যাবে না।