গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে মানুষ স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হয়নি। বিভিন্ন স্থানের মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউন ও আশেপাশের এলাকায় এখন চলছে নীরবে চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ পলাতক থাকলেও খোলস বদলে বিভিন্ন পরিচয়ে আগের জায়গা দখলে নিয়েছে। তারা জানান-চাঁদা না দিয়ে এলাকায় কেউ ব্যবসা করতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার কারণে মানুষ নিরবে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন।

জানা গেছে, উত্তরা-তুরাগসহ ঢাকা-১৮ আসনের বিভিন্ন এলাকায় নীরবে দখলবাজি, চাঁদাবাজির নগরীতে পরিণত হয়েছে। ছয়টি থানার বিশাল এলাকা ঘিরে এক শ্রেণির চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ ও একশ্রেণির সুবিধাবাদী আস্তানা গড়ে তুলেছে। এছাড়া উত্তরা, বিমানবন্দর ও তুরাগে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও কমেনি । স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন এই এলাকায় লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন, এত টাকা যায় কোথায়? কারা এই বিপুল পরিমান টাকার ভাগ পায়? চাঁদাবাজদের খুঁটির জোর কোথায়! কারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা? ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাজুড়ে চাঁদাবাজী ও দখলবাজীর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের হাত। তারা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিকভাবে একটা চেইন দ্বারা আবদ্ধ। প্রতিটি অবৈধ বাজার, ট্রাফিক স্ট্যান্ড তাদের দখলে। এর মাসোহারা চলে যায় প্রভাবশালীদের কাছে। পুলিশ মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান চালালেও বন্ধ হয় না চাঁদাবাজি।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিত্যক্ত খালি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা রাতারাতি গড়ে উঠেছে। এসব উৎস ঘিরে এক শ্রেণির দালাল চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা অবৈধভাবে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে। সুত্র জানান, উত্তরা বিভাগের ৬টি থানা এলাকায় দলীয় পরিচয়ে এক শ্রেণির চাঁদাবাজদের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে।

উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ বলছে, গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে উত্তরার ৫ নং সেক্টর ৬ /এ নং সড়কের ১৩ নং বাড়ি বায়োটেক কর্পোরেশন নামের একটি মেডিকেটেড কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে ভাঙচুর-লুটপাট এবং অপহরণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ঘটনার খবর পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. রিয়াজুল ইসলামকে উদ্ধারসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পুলিশ আরো জানায়, আটককৃতরা হলো- কাজী জোবায়ের ও আবির হাসান। ইতিপূর্বে কাজী জোবায়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দু’জনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং ২ থেকে ৩ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা রুজু করা হয়।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জুলাই দুপুরে ও বিকেলে উত্তরা ১০ নং সেক্টর সংলগ্ন স্লুইচ গেট এলাকার ফলের আড়ৎ হতে বিএনপির বহিষ্কৃত একনেতা মিলনসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর তুরাগ- উত্তরার (দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প) সদস্যরা। আটককৃত ব্যক্তিরা হলো মো: মিলন, মো: সেলিম রানা, মোঃ সাইদুল ইসলাম, মোঃ কাজিম উদ্দিন ও মো: আব্দুর রহিম মান্নান। পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া গত ৪ আগস্ট দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পূর্বাচল আর্মি ক্যাম্পের একটি টহল দল খিলক্ষেত মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মাসুদ রানাকে (৩৫) আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকা ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।