নিয়মিত ফ্লাইটে ১৭ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিমানের সেই ফ্লাইট বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে। তার এই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে বিএনপির একটি টিম।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপত্তার টিমের দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একে এম শামছুল ইসলাম, আমি নিজে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্যরা বিমানবন্দরে গিয়েছি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের গতকাল তিনি এসব কথা জানান।
সালাহউদ্দিন বলেন, বিমানবন্দরে তিনি (তারেক রহমান) অবতরণ করার পর গাড়িতে ওঠা এবং যে রাস্তা দিয়ে এভার কেয়ার হাসপাতালে (এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া) যাবেন, সেখান থেকে গুলশানের বাসায় আসা ও অন্যান্য যেসব অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে বিএনপি, সবগুলো আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয়ন করতে গিয়েছিলাম। আর নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে সরকারের সংশ্লিষ্টমহল এবং সব বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা টিমের প্রধান সমন্বয়ন করছেন। তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন।
তারেক রহমানের স্বদেশে ফেরা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি বেশ সহযোগিতা পাচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, তারা কীভাবে ২৪ ডিসেম্বর রাতে কিংবা ২৫ তারিখ সকালের মধ্যে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় আসবেন।
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসে যা কিছু দৃষ্টান্ত আছে, তাকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এই রকম ঘটনা না হয়, সেই রকম স্মরণীয় করে রাখার জন্য সমস্ত আয়োজন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি আরও বলেন, আশা করি সারাদেশে মানুষ সেজন্য অপেক্ষা করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন, তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে দেশে ফিরবেন। তারা লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় আসবেন।
তারেক রহমানের আগমন ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাকে বরণ ও স্বাগত জানাতে বিএনপির উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার আয়োজন চলছে।
তারেক রহমানকে ৩০০ ফিট নাকি অন্য কোথায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে এই সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা জায়গাগুলো দেখছি। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাকে এক নজর দেখার জন্য ও কথা শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আমরা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তবে জনদুর্ভোগের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সেটাও বিবেচনায় আছে।
এদিকে তারেক রহমানকে সংবধর্না জানাতে সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের জন্য ২৪ ডিসেম্বর ৭টি রুটে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত বগি রিজার্ভের অনুমতি চেয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই চিঠি দেয়া হয়েছে। রুটসমূহ হচ্ছে, কক্সবাজার-ঢাকা, সিলেট-ঢাকা, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা,টাঙ্গাইল-ঢাকা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা, পঞ্চগড়-নিলফামারী-পার্বতীপুর-ঢাকা এবং কুড়িগ্রাম-রংপুর ঢাকা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ তারিখ যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন। তাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা ঢাকায় আসবেন। তাদের আগমনের সুবিধার্থে বিএনপির পক্ষ থেকে ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিভিন্ন রুটে রেলগাড়ি রিজার্ভ করতে ইচ্ছুক। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করা হবে। ৭টি রুটে ১টি করে স্পেশাল ট্রেন/অতিরিক্ত বগি রিজার্ভ করার অনুমতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে আটক হয়ে ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পান তারেক রহমান। তিনি ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছাড়েন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।