চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দ্রুতই চূড়ান্ত জুলাই সনদ দেয়া যাবে। তাছাড়া ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের সাথে কমিশন বৈঠক করবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একথা জানান। আলী রীয়াজ বলেন, ১৮টি সুপারিশ পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ১২টি আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে সরকার। এছাড়া বাস্তবায়নের পথে রয়েছে ৯২টি। ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খসড়া নিয়ে দলের মতামত নেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এরপর বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। আশা করা যায়, দ্রুত চূড়ান্ত সনদ দেয়া যাবে।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন করার একটা বড় রকমের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে যতটা সম্ভব স্বচ্ছতার সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশন একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। এর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ সময় তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টি বিষয়ে কোনো ধরনের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল না, বাকি ৯টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি বা জাতীয় সংসদ সদস্যদের যে প্রভাব থাকে, তা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আইনত বৈধ নয়। যেভাবে স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ যুক্ত থাকে, সেটা তাদের থাকার কথাও নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় যে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সাংসদদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে।
যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণের পর তার ভবিষ্যত কী হবে, তা জানতে চাওয়া একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অবস্থা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা কী এবং কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করলে নোট অব ডিসেন্ট গুরুত্ববহ হবে, তা জানতে বিশেষজ্ঞগণের মতামত নেওয়া হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল যখন ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তার গুরুত্বও বিবেচনা করতে হবে।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে- এই প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন যুক্ত নয়। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের কথা বলেছে। এ সনদ বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। এ আলোচনার মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদী হবে না বলেও জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ঐকমত্য কমিশনের এই সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয় যে, কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর কিভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা কেমন হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে কমিশন।