ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তায় অস্ত্রসহ আনসার সদস্য রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আনসার। এবার আমরা আরেকটা জিনিস করতেছি, অন্য সময়ে থাকে না, এবার প্রিজাইডিং অফিসারকে নিরাপত্তা দিতে হাতিয়ারসহ আনসার থাকছে। অনেক সময় প্রিজাইডিং অফিসারের ওপর (লোকজন) হামলা করতে যায়। এজন্য উনার জন্য হাতিয়ারসহ একটা গার্ডের ব্যবস্থা করছি। ওনাকে কেউ যেন কোনো কিছু না করতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয় সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়টিও সামনে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্তের তথ্য দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অন্য সময়ে প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে চারজন নারী ও ছয়জন পুরুষ আনসার সদস্য দেওয়া হয়, যাদের কাছে হাতিয়ার থাকে না। হাতিয়াসহ থাকেন দুইজন আনসার সদস্য। এবার হাতিয়ারসহ তিনজন আনসার সদস্য থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আনসার ছাড়াও পুলিশ ও র্যাব মোতায়েনের আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন উপদেষ্টা।
আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা অনেক উন্নত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ কাজে যোগদান করছে না, আনসার বিদ্রোহ করছে, বিভিন্ন বাহিনী অত সক্রিয় না- এগুলো এখন নেই, অনেক উন্নত হয়েছে। তবে যতটা আশা করেছিলাম সেটা হয়তো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু একটা মানে পৌঁছেছি, তবে আমাদের সময় রয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। মূল কাজ করবেন নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা। তারা নির্বাচনটা কীভাবে চাচ্ছেন, নির্বাচন কমিশন কীভাবে চাচ্ছে। প্রশাসন রয়েছে, তারপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরের বিষয়টি জনগণ, তাদেরতো ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা এবং সুষ্ঠু না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায় এড়াতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচন সুন্দর হলে প্রশংসা করবে, দায়ী কেন করবে? প্রশংসা করবে। আমি এরকম একটা নির্বাচন করে যেতে চাচ্ছি, দেখা হলে যেন প্রশংসা করেন, কেমন আছেন বললে মুখ ঘুরিয়ে না নেন। আর সুষ্ঠু না হলে আপনাদের (সাংবাদিক) সাথে কাঠগড়ায় দাঁড়াব। গতবছরের জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যেসব অস্ত্র হারিয়ে গেছে বা লুট হয়েছে তা উদ্ধারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ব্যাপারে একটা পুরস্কাও ঘোষণা করা হচ্ছে। যারা সন্ধান দিতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। দুই একদিনের মধ্যে এটি জানানো হবে। এ বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ অস্ত্র উদ্ধার বাকি রয়েছে। সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা ও পুলিশি স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৮১৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং ৬ লাখ ৭ হাজার ২৬২টি গোলাবারুদ লুট হওয়ার তথ্য এসেছিল। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের সন্ধান দিলে পুরস্কার মিলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের যে অস্ত্রগুলো হারিয়ে গেছে, এগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা একটা সার্কুলার দিচ্ছি। একটি পুরস্কারও ঘোষণা করছি। যে তথ্য দেবে, তাকে আমরা কত টাকা দিতে পারি, সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে একটা কমিটি করে দু-চার দিনের মধ্যে হয়তো গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দেব। কেউ যদি খবর দিতে পারে, সে পুরস্কারটা পাবে।
নিউমার্কেট থেকে ‘সামুরাই’, চাপাতিসহ ‘ধারাল অস্ত্র’ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব যারা বানায়, তাদের আরো সর্তক হতে হবে। তারা জানে কারা এসব ব্যবহার করছে। যারা এগুলো করছে তাদের আইনের হাতে নেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতি হিসেবে আমরা অসহিষ্ণু হয়ে গেছি। সমাজে একটা খারাপ ঘটনা ঘটতে থাকলে লোকজন আগে কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়তো, তা প্রতিহত করার জন্য। আজকে সে জিনিসটা কমে গেছে, প্রতিহত করে না। ভিডিও করার জন্য ব্যস্ত থাকে। সাংবাদিক তুহিন হত্যার সময় ওই সাংবাদিক যদি মোবাইলটা তাদের দিকে ছুঁড়েও মারে, তাহলে বড় ধরনের কাজ হয় মনে করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকে না তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, গাজীপুরের যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যারা জড়িত তাদের অধিকাংশকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। তারা যেন প্রকৃত শাস্তি পায়, সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। শেরপুরে স্বামী হাতে এক নারীর নির্যাতনে বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, নাতি ভিডিও করেছে, ইউটিউবে দিয়ে পয়সা পাওয়ার জন্য। এখানে ভিডিও না করে এগিয়ে এলে অনেক ভালো হত। চিৎকার করলেও এলাকার লোকজন এগিয়ে আসতো।