বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাট ও পাচারের খাত হিসেবে ব্যবহার করেছে। দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে কিছু সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি করেছে ওই সরকার। তাদের অপরাধ ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের চেয়েও জঘন্যতম। পটপরিবর্তনের পর ৮ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার এ খাতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, দেশবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের যোগান দেয়ার জন্য সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এবার আশা করছি লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিছু লোডশেডিং হলেও সেটা শহর ও গ্রামে সমান পর্যায়ে হবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য হবে না বলেও জানান উপদেষ্টা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স- (এফইআরবি) আয়োজিত এ সেমিনারে জ্বালানি সংকট ও করণীয় বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডীন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। আলোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়াল- সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, পিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম। এফইআরবি’র চেয়ারম্যান মো. শামিম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনার পরিচালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সেরাজুল ইসলাম সিরাজ। সেমিনারে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দেশে নতুন গ্যাস কূপ খননে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উচ্চদামে এলএনজি আমদানি করে দেশের সংকট মোকাবিলার উদ্যোগ নিলেও মূলত তাদের লক্ষ্যই ছিল দুর্নীতি। বর্তমান সরকার সেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সেই পুরনো নীতিই চালু রেখেছে। বড় আকারে গ্যাস অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খননে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যে লুটপাট করেছে, সেটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলতে পারেন। দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের যে ক্ষতি করেছে তার নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্র পড়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, সরকার এবার গরমে লোডশেডিং সীমিত পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা ১৮ হাজার মেগাওয়াট টার্গেট ঠিক করে কাজ করছি। সবার সম্মিলিত চেষ্টা ও সহযোগিতা পেলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে। তবে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণে সমন্বয় থাকবে। গ্রাম ও শহরের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সেমিনারে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এ সরকার হচ্ছে একটি স্বল্প মেয়াদের সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের একটি ধারণা দিয়েছেন। দেশের জ্বালানি সমস্যা স্থায়ীভাবে দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ দরকার। সেই ধরনের কোনো পদক্ষেপ আমরা নীতিগত কারণেই নিতে পারছি না।