সরকারের প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম গড়ে ২০ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে শঙ্কা জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংগঠনটি বলছে, নতুন নীতিমালায় অযৌক্তিক রাজস্ব ভাগাভাগি, উচ্চ লাইসেন্স ফি এবং মোবাইল অপারেটরদের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, নতুন গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে খরচ বাড়বে ২০ শতাংশ পর্যন্ত এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) অপারেটরদের ক্রয়মূল্য বাড়বে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন করে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং এবং ১ শতাংশ সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) আরোপ করা হচ্ছে। এতে উচ্চ লাইসেন্স ফি ও প্রশাসনিক চার্জ সরাসরি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের দাম বাড়াবে। এতে সাধারণ গ্রাহক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ পুরো ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন নীতিমালায় সব সুবিধাই বিদেশি কোম্পানি স্টারলিংকের পক্ষে গেছে। যেখানে স্টারলিংক মাত্র ১২ লাখ টাকায় অনুমোদন পাচ্ছে, সেখানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ বৈষম্য। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান নীতিমালায় মোবাইল ফোন অপারেটররা সব দিক থেকে উপকৃত হচ্ছে। অথচ এরা অধিকাংশই বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। রাষ্ট্রের স্বার্থে এই নীতিগত বৈষম্যের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সরকার ভুলপথে এগোচ্ছে। লাইসেন্স গাইডলাইনে জনআকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়নি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এ ব্যবসায় এসেছেন, তাদের আয়ের ওপরই এখন রেভিনিউ ও সামাজিক তহবিল (এসওএফ) চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইএসপিএবি সভাপতি সতর্ক করে বলেন, গাইডলাইন সংশোধন না হলে দেশের বহু আইএসপি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহক ২০ শতাংশ বাড়তি দামে ইন্টারনেট নিতে পারবেন না। এর পরিণতিতে গ্রামীণ ইন্টারনেট সংযোগ এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই ঝুঁকিতে পড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি সত্যিই জনগণের সরকার হয়, তবে জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের হাতে ছেড়ে দিন।

সাংবাদিক সম্মেলনে আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড কানেক্টিভিটির সুযোগ দেওয়া মানে দেশীয় বিনিয়োগকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে মুখে ফেলবে। নতুন খসড়া গাইডলাইনটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।

আইএসপিএবির সাত দফা দাবিগুলো হচ্ছে, সেলুলার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার (সিএমএসপি) গাইডলাইন থেকে এফডাব্লিউএ ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস বাতিল করতে হবে। সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে হোম/অফিস/ইনডোর প্রাঙ্গণে ফাইবার কানেক্টিভিটি ডেপ্লয় করার অনুমতি বাতিল করতে হবে। সিএমএসপি গাইডলাইন থেকে সার্ভিস ডেলিভারির জন্য আইএসএম/ওয়াইফাই ব্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এফটিএসপি-এর জন্য অ্যাক্টিভ অবকাঠামো শেয়ারিং সংক্রান্ত গাইডলাইন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এফটিএসপি গাইডলাইন থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং ও ১ শতাংশ সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ) এবং উচ্চ লাইসেন্স ফি বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আইপিটিএসপি এসএমএস সার্ভিস ও মোবাইল ডায়ালার বিষয়ে বিস্তারিত কোনও নির্দেশনা নেই। এ দুটি বিষয়ে স্পষ্টীকরণ চাই। এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং জেলা এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার)-এর মধ্যে সার্ভিস বৈষম্য রাখা যাবে না। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবির সহ-সভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব আলম প্রমুখ।