জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিকে কেন্দ্র করে শাহবাগের মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে মানুষের ঢল নামে। জামায়াতের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সকালেই শাহবাগ ও সাবেক পিজি হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকে। সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মুখে ছিল আনন্দের হাসি-উল্লাস। তখন আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শাহবাগের মোড়। সাধারণ মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য শাহবাগের মোড়ে জড়ো হন, কারণ তারা বিশ^াস করতেন তিনি নির্দোষ, তাকে অন্যায় ভাবে জালিম হাসিনা গংরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। নেতাকর্মীরা আরও স্লোগান দিতে থাকেন ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা, নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার, জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ। কারণ তাদের প্রিয় মজলুম নেতা মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী মিথ্যা সাজানো অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়ার পর দীর্ঘ ১৪ বছর পর গতকাল বুধবার কারামুক্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষ মনে করেন, আজ থেকে এক যুগ আগে এই শাহবাগের মোড়েই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ‘মব’ সৃষ্টি করে সাজানো বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের হত্যা করার আয়োজন করে। এদিকে শাহবাগ মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা বিশাল অভ্যর্থনা দিয়ে মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। এবং পরে আল ফালাহ মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায়ও যোগদান করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর জামায়াতের এই শীর্ষনেতা মুক্তির পর একটি আনন্দঘন দিন অতিবাহিত করেন।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। হাসপাতাল গেটেই তাকে অভ্যর্থনা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি আবেগঘন বক্তব্য দেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা। জনসমক্ষে এসে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ; ‘আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।

নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষরাও সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলেন এবং একসাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করার অঙ্গীকার করেন। আবু সাদাত নামে একজন বলেন, ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হলে আস্তে আস্তে তাদের কুর্কীতিগুলো সামনে আসতে থাকে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা করে যে জেল-জুলুম করা হচ্ছিল, তারও অবসান ঘটতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় অবশেষে অভিযোগমুক্ত হলেন এটিএম আজহার।

সমাবেশে আসা আমিরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!

মো. তোয়াহা বলেন, এটা শুধু একজন মজলুমের মুক্তির রায় নয়। এই রায় দ্বারা একটা মজলুম সংগঠন যুগ যুগ ধরে যে মিথ্যা অপবাদের বোঝা বহন করে চলেছে, তার কবর রচিত হয়েছে। যেসব মুজাহিদ মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এই রায়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করেছিল। অবশেষে আল্লাহ তাআলা জাতির কাছে সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

আবুৃ সুফিয়ান নামে একজন বলেন, আজকের রায়ে প্রমাণ হল জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। এই হত্যাকা-ের বিচার করতে হবে। শেখ হাসনাত নামে একজন সাধারণ নাগরিক মনে করেন, মাওলানা নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, মীর কাসেম আলীসহ সকল বিচারের রিভিউ হওয়া প্রয়োজন।