বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ। এর প্রভাবে শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ উপকূলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে; বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাহাড়ধসের শঙ্কায় পার্বত্যাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছে প্রশাসন। দুই দিন ধরে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। দমকা হাওয়ায় বিপর্যস্ত উপকূলীয় জনপদের মানুষ। ঝড়ো হাওয়ায় বহু জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে জোয়ারের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা জনপদ নোয়াখালী। জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার তিনটি নদীতীরবর্তী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও সড়ক হাঁটু পানির নিচে। চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে এ অঞ্চলে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে, দুই দিনের ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের জনপদও বিপর্যস্ত হয়েছে। কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে বরগুনার উপকূলীয় এলাকা। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে মানিকখালি ও উত্তর ডালভাঙা এলাকার বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ পরিবার।

এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় নাকাল ভোলার নদীতীরবর্তী মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলবাসী। ঝালকাঠিতেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীপারের সড়ক।

এক স্থানীয় নারী বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্ট করছি। এখন আমাদের থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। আরেক ব্যক্তি জানান, গতকাল ২০০ থেকে ২৫০ মহিষ নদীতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় কয়েকটি উদ্ধার করা গেলেও বাকিগুলোর খোঁজ নেই।

ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল রয়েছে সমুদ্র। ঢেউয়ের তোড়ে পতেঙ্গায় আছড়ে পড়েছে দুটি জাহাজ। এদিকে, বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল। বৈরী আবহাওয়ায় পাহাড়ের নীল আকাশও এখন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পার্বত্যাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের কিছু কিছু জেলায় আরও একদিন বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৯৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, গতকাল বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি সমতল অতিক্রম করায় শনিবার পর্যন্ত দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

শক্তিশালী সাইক্লোনের আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সাগরে বায়ুতাড়িত বাতাস রয়েছে, যে কারণে প্রতিটি বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুই বিভাগ বাদে দেশের অন্যান্য কিছু অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬ মি.মি.। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের মাইজদীকোর্ট এলাকায়Ñ ২৮৫ মি.মি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চাঁদপুরেÑ ২৪১ মি.মি। এছাড়াও, সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে গত চার দিন ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে দ্বীপের অন্তত শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানান- দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গলাচিপা, কোনাপাড়া ও দক্ষিণপাড়া এলাকায় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে। অনেক এলাকায় সাগরের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন- দ্বীপের তিনটি বড় পাড়া বর্তমানে জোয়ারের পানিতে ডুবে রয়েছে। এতে শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘাটে নোঙর করা অবস্থায় বেশ কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলার সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে আবারও দ্বীপে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া, যা দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

টানা বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল বন্ধ রয়েছে চার দিন ধরে। এর ফলে দ্বীপে দেখা দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান- বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি দ্বীপের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। এতে ঘাটে থাকা কয়েকটি ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়াতেও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুতুবদিয়ার বেশকিছু নিম্নাঞ্চল সমুদ্রের নোনা পানিতে ডুবে রয়েছে। মহেশখালীর কুতুবজোমের ঘঁঠিভাঙ্গা এলাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দানু মিয়া নামের ওই ব্যক্তি মৃগী রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

এদিকে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টানা বর্ষণে ভয়াবহ পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলে এলাকায় ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। এছাড়াও নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার শহরের পর্যটন স্পট সমুদ্রসৈকত এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। একের পর এক প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের দোকানপাট ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও হাজারো ভ্রমণপিপাসু সৈকতে ভিড় করেছে।

সাগর উত্তাল থাকায় বারবার মাইকিং করেও পর্যটকদের সরানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইফ গার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা। বিশেষ করে সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী পয়েন্টে জোয়ারের পানি সড়ক পর্যন্ত চলে এসেছে, তলিয়ে গেছে বহু দোকান।

সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর জানান- মাদরাসা পয়েন্ট থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। লাবনী ও সুগন্ধা পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্স এবং বহু দোকান তলিয়ে গেছে। কলাতলী পয়েন্টেও পরিস্থিতি একই রকম। তিনি বলেন- সাপ্তাহিক ছুটির কারণে কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় করেছে। বারবার সতর্ক করার পরও অনেকেই সাগরে নামছেন, যা বিপজ্জনক।

স্থানীয় বাসিন্দা আরফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুইদিন ধরে পানি জমে আছে। এখনো কেউ আমাদের খাবার দেয়নি। বৃষ্টির পানি খেয়ে আর দোকান থেকে চুলামুড়ি এনে কোনোভাবে দিন পার করছি। এলাকার গোমাতলী জামে মসজিদটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলাম জানান,মসজিদের ভেতরে কোমরসমান পানি উঠেছে। নামাজ আদায় বন্ধ রয়েছে। মুসল্লিরা আসতে পারছেন না।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিপাত হলেও এবার বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতার তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত চলে। এতে সাগার উত্তাল হওয়ায় চট্টগ্রামের উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে ব্যবহৃত লাইটার জাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে ¯’গিত করা হয়েছে। উপকূলে সাগরের উত্তাল ঢেউ ও ঝোড়ো হাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি নৌযান তীরে উঠে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী ফ্লাইট বিজি-১৪৭ চট্টগ্রামে অবতরণ করতে না পেরে ঢাকায় ফিরে গেছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৩৬ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ধসের। শনিবার থেকে কমে যাবে বৃষ্টিপাত। নামিয়ে ফেলা হবে সতর্কতা সংকেত।

চট্টগ্রাম অফিস

উপকূলে সাগরের উত্তাল ঢেউ ও ঝোড়ো হাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি নৌযান তীরে উঠে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপকূলে জাহাজগুলো আটকা পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার আওতাধীন আনোয়ারা উপকূলে দুটি নৌযান আটকা পড়ে। নৌযান দুটি হলো- বার্জ মারমেইড-৩ এবং টাগবোট নাভিমার-৩। একই রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলে আরও দুটি জাহাজ ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে তীরে উঠে আসে। এ জাহাজ দুটি হলো এমভি আল-হেরেম এবং বিএলপিজি সুফিয়া।

নোয়াখালী থেকে বোরহান উদ্দিন জানান, জেলার নলাচরে বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় শতাধিক ঘর ভেসে গেছে জলোচ্ছ্বাসে। থানারহাটে পানির তীব্রতায় ১০টির অধিক দোকানসহ মালামাল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে হতাহতের তথ্যে একজন নিহত ও বেশ কয়েকটি গবাদিপশু মারা গেছে বলে জানা গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম আনোয়ারুল আজিম রাজু। তিনি হাতিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পানিতে বিদ্যুতের তার স্পৃশ্য হয়ে তিনি মারা যান। সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ম্যানেজার হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বেশ কিছু মরা গরু ভাসতে দেখা গেছে। সন্দেহ করা যাচ্ছে নোয়াখালীর জাহাইজ্জা চর থেকে ভেসে এসেছে এই গরুগুলো। মোবাইলে পর্যাপ্ত চার্জ এবং সংযোগ না পাওয়ার কারণে জাহাইজ্জাচরে খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি। যথাযথ তথ্য নিয়ে এবিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানান তিনি।

নিঝুমদ্বিপের সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা তাজুল ইসলাম জানান, প্রবল জলোচ্ছ্বাসে নিঝুমদ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব ও জোয়ারের ফলে স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঝুমদ্বীপের ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, বিপাকে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। বাড়ি ঘরে পানি ডুকে যাওয়ার ফলে গতরাতে নিঝুম দ্বীপে কোনো মানুষ রান্নাবান্না করতে পারেনি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চরম দূর্ভোগে ওই অঞ্চলের জনজীবন। এর মধ্যে তথ্য পাওয়া গেছে প্রায় ১০০০ মাছের খামার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ঢাকাসহ দেশের সাত বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ফলে পাঁচ জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে প্রথমে স্থল নিম্নচাপ এবং পরে আরও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসাবে শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থান করেছে। এর প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

৬ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা

গভীর নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিপাতে দেশের বেশির ভাগ নদ–নদীর পানি বেড়েছে। এর ফলে দেশের ছয় জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্থাটি জানায়, আগামী রোববারের মধ্যে এসব নদীর পানি কমতে শুরু করতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে দেশের প্রায় সব জায়গায় নদ–নদীর পানি বেড়েছে। ৬৭টি পর্যবেক্ষণকারী নদ–নদীর ৫০টিতেই পানি বেড়েছে। এসব নদ–নদীর যে ১১৬টি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে ৮৯টিতেই পানি বেড়েছে।

কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আজ ও আগামীকাল বাড়তে পারে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী ইত্যাদি নদীর পানি বাড়তে পারে।

(রিপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম থেকে নূরুল আমীন মিন্টু, নোয়াখালী থেকে বোরহান উদ্দিন, লক্ষীপুর থেকে সেলিম নিজামী, কক্সবাজার থেকে শাহনেওয়াজ জিল্লু ও বরগুনা থেকে এস এম নাসীর মাহামুদ)