সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও তার স্বামীর ৪৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধে আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে কামরুল ইসলামের ২৩ হিসাবে ২ কোটি ৪২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৩ টাকা, দীপু মনির ১৮টি হিসাবে ৬ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৬ টাকা ও তাওফিক নেওয়াজের চারটি হিসাবে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৫ টাকা থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।
কামরুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদনে বলা হয়, তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এসব অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার চেষ্টা চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সেগুলো অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কামরুল ইসলামের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৫ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয় একই আদালত।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকার উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৯ নভেম্বর তাকে নিউ মার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
অপরদিকে দীপু মনির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদনে বলা হয়, তিনি ‘তৈমুর নাওয়াজ’ ও ‘জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ’ নামে হিসাবের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহে বিপুল সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সেগুলো অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
তার স্বামীর বিরুদ্ধে আবেদনে বলা হয়, তাওফিক নেওয়াজ ব্যাংক হিসাব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। ফলে সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে অবরুদ্ধে করা প্রয়োজন।
গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ১৯ অগাস্ট বারিধারা এলাকা থেকে দিপু মনিকে গ্রেপ্তারের দফায় দফায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
সপরিবারে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস, মেয়ে সুমাইয়া আলী ঈশিতা, দুই ছেলে আশিক আলী ও মাহতাব আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সিফাত উদ্দিন আবেদনটি করেন। আবেদনে বলা হয়, নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন’, ‘খাস জমি দখল করে’ পাঁচতলা বাণিজ্যিক হোটেল নির্মাণ, ‘সন্দেহজনক লেনদেন বা অর্থ পাচার’ এবং ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য সপরিবারে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, দুদক এমন তথ্য পেয়েছে দাবি করে আবেদন বলা হয়েছে, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত রাখা প্রয়োজন মনে করছে সংস্থাটি।
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি। সে সময় হাতিয়ার চর কৈলাশে নিজ বাড়িতে ছিলেন সাবেক হয়ে যাওয়া সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস ও ছেলে হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী। ১০ অগাস্ট রাত ৩টার দিকে নৌবাহিনীর তাদের হেফাজতে নেয়। মোহাম্মদ আলী জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র ও সবশেষ আওয়ামী লীগ থেকে হাতিয়ার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস একই কমিটির সহসভাপতি।