ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর বিবিধ শাখার অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমান। তার আত্নীয় মো: হাসেম অফিসে আসেন তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য। ঢাকার একটি হাসপাতালে হাসেমের ভাগিনা (বোনের ছেলে) চিকিৎসাধীন থাকায় ট্রেড লাইসেন্সটি নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাসহ কাগজপত্র আত্নীয় হাবিবুর রহমানের কাছে দিয়ে যেতে চায়। এসময় হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি খুবই ব্যস্ত। এখন তার পক্ষে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময় নেই। এ্ নিয়ে দুই আত্নীয়ের কথা হচ্ছিল। এসময় কে বা কারা ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে প্রশাসনকে দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ঘুষ’ নেয়ার কল্পকাহিনী প্রচার করে। বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করা হয়। এ অবস্থায় দৈনিক সংগ্রামের তদন্তে জানা গেল, ঘুষ নেয়া হচ্ছে এমন মিথ্যা কাহিনীর পেছনে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিবিএ নির্বাচন। মূলত হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে। এখঅনে ঘুষ দেয়া বা নেযার কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
সূত্র মতে, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩ এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেন এবং ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর বিবিধ শাখার অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই মঙ্গলবার অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ উল মোস্তাক রাজস্ব বিভাগের ওই কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে নিজেদের অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাবও দিয়েছেন।
ভিডিওটির সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এ যান এ প্রতিবেদক। তার সাথে কথা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এসময় পুরো ভিডিওটির বক্তব্য ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সব কিছু দেখে ও সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহিতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘুষ নেয়ার এই তথ্য একেবারের ভিত্তিহীন। ঝিকে মেরে বউকে বুঝানোর মতো ঘটনা।
সেবাগ্রহিতা মো. হাসেমের সাথে গত ২ জুলাই বুধবার দৈনিক সংগ্রামের এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘুষ দেওয়া বা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন অনলাইনের মাধ্যমে হয়। এর আগেও আমি ট্রেড লাইসেন্স করেছি। তাছাড়া ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর বিবিধ শাখার অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমান হলো আমার ভাই (আত্নীয়)। তাকে ঘুষ দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। হাসেম বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। গত ২৯ জুন ওই প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩ এর কার্যালয়ে যাই। এর আগে আমার ভাগিনাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি রেখে আমি এখানে আসি। যে কারণে আমি ওইদিন খুবই ব্যস্ত ও সমস্যায় ছিলাম। যে কারনে হাবিব ভাইকে ট্রেড লাইসেন্সে নবায়নের ফি’র টাকা দিতে অনুরোধ করেছিলাম যেনো আমার কাজটি তিনি করে দেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় আমার কাছ থেকে টাকা নিতে এবং কাজটি করে দিতে রাজি হননি। পরে আমি টাকা নিয়ে আমার কাজে চলে যাই। এখানে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি কি করে আসলো বুঝতে পারছি না। তিনি সংশ্লিষ্ট ডিএনসিসি কর্মকর্তার কাছেও বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান।
এদিকে সম্পূর্ণ ভিডিওতে দেখা গেছে, ডিএনসিসি’র অফিস সহকারি হাবিব বলছিলেন, আমি এখন টাকা নিতে পারবো না। আপনি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে যান। এসময় জোর করলেও তিনি টাকাসহ কাগজপত্র ফেরত দেন। এক পর্যায়ে তার আত্নীয় হাসেম টাকাসহ ডকুমেন্টস নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন। যদি ঘুষই নেয়ার ইচ্ছে থাকত, তাহলে তিনি নিরবে টাকা নিয়ে নিতেন।
এ বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর কর্মকর্তা জানান, ঘুষ লেনদেনের মতো ঘটনা আমাদের প্রতিষ্ঠানে ঘটে বলে আমার জানা নেই। সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হতে পারে। বাকিটা আপনারা অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩ এর লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার শেখ শওকত হোসেন ও বিবিধ শাখার অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমানের নামে একটি ভিডিও প্রকাশ করে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার বাস্তব কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি ভালোভাবে খেয়াল করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি নিতান্তই রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য করা হয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত শেখ শওকত হোসেন কাজের পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতি করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটির জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (শ্রমিক দল) সহসভাপতি। ওই কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী (নমুনা সংগ্রহকারী) হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু গত মাসের ৮ জুন তিনি অবসরে যান। তিনি অবসরে গেলেও রাজনৈতিক পদ এখনো ছাড়েন নি। নিয়ম অনুযায়ী কমটির সভাপতি অবসরে যাওয়ায় সহসভাপতি নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেটি যাতে না হয়, তাই কথিত এই ঘুষ নেয়ার কাহিনী প্রচার করা হয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের কাছে জানিয়েছেন।
এদিকে অবসরে গিয়ে কিভাবে অফিস করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি এখন এলপিআর এ আছি। অফিস করতে বাধা কোথায়। ঘুষ লেনদেনের ভিডিও’র বিষয়ে তার সম্পৃক্ততার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
এদিকে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন শেখ শওকত হোসেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি অঞ্চল-৩ এ লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার ও পৌরকর শাখার উপকর কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে কর্মরত আছি। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করি। তারপরেও যদি আমার জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কোন নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়ে থাকি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৯/০৬/২০২৫ ইং তারিখ আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে সম্পর্কে তার কাকা ও কাকার ছেলের নামে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সটি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছর নবায়ন করার জন্য অত্র অঞ্চল-৩ এ বিবিধ আদায় শাখা আমার ব্যবহৃত কক্ষে তিনি থাকা অবস্থায় আসেন এবং তার লাইসেন্স ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছর নবায়ন করে দেওয়ার জন্য সরকারি টাকা তার হাতে জোর করে দেন কিন্তু তিনি উক্ত টাকা না রেখে উনাকে জুলাই মাসের ০২ অথবা ০৩ তারিখে এসে নিজে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকার রিসিট নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তার কাকা টাকা জমা দিয়ে দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করেন তখন তিনি তাকে বলেন, এখন ব্যাংক টাকা জমা নিবে না জুলাই মাসের ২/৩ তারিখে টাকা জমা নিবে এবং যেহেতু ব্যাংক এখন টাকা জমা নিবে না, ফলে তার কাছে পড়ে থাকবে, সেহেতু আপনার টাকা আপনার নিকট রাখেন বলে উক্ত টাকা তাকে সাথে সাথে ফেরত প্রদান করেন মর্মে মো. হাবিবুর রহমান মৌখিকভাবে জানান। ফলে মো. হাবিবুর রহমান এর মধ্যমে লাইসেন্স সেবাগ্রহীতাগণকে জিম্মি করে হয়রানি ও কোন প্রকার টাকা পয়সা আমি গ্রহণ করি নাই। এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন ও রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার জন্য প্রতিপক্ষের কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করতে পারে বলে আমি ধারণা করছি। একই সঙ্গে আমার পারিবারিক এবং সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার জন্য বিনীত অনুরোধ করেন হাবির রহমান।