রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিং কমপ্লেক্সের সম্পা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই চোর চক্রটি প্রায় তিন মাস আগে থেকে এই সোনার দোকানে চুরির পরিকল্পনায় রেকি শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঘটনার দিন দিনের বেলায় ওই মার্কেটের ওয়াশরুমের জানালায় একটি চিকন সুতা ঝুলিয়ে রাখে। পরে ওই সুতার সাহায্যে একটি মোটা দড়ি বেঁধে উপরে উঠে জানালার গ্রিল ভেঙে মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) মো. শফিকুল ইসলাম।
গ্রেফতাররা হলেন- শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৬), নুরুল ইসলাম (৩৩), উত্তম চন্দ্র সূর (৪৯) ও অনিতা রায় (৩১)। এসময় চুরি হওয়া ১৯০ ভরি সোনা, সামান্য রুপা, একটি মোটরসাইকেল এবং সোনা বিক্রির নগদ এক লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ফরচুন মার্কেটের দোতলায় সম্পা জুয়েলার্সে গত ৮ অক্টোবর দিনগত রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্য-প্রযুক্তি ও মাঠতথ্যের ভিত্তিতে তিন দিনের টানা অভিযানে চোরচক্রকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা (চুরির ঘটনায় জড়িত আসামিরা) প্রায় তিন মাস ধরে এই দোকান ও মার্কেট পর্যবেক্ষণ (রেকি) করেন। ঘটনার দিন দিনের বেলায় বাথরুমের জানালায় ইউলুপ করে চিকন সুতা বেঁধে যান। রাতে এসে সেই সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে উপরে উঠে গ্রিল কেটে মার্কেটে প্রবেশ করেন। সেখানে বাথরুমে আগে থেকেই বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম লুকি রাখা ছিল। এরপর তারা মার্কেটে প্রবেশ করে চুরি করেন। তিনি বলেন, ডিবির তিনটি টিম টানা ৭২ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতব্বরকে গ্রেফতার, ফরিদপুর থেকে চুরিকৃত সোনা উদ্ধার, পরে বরিশাল থেকে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় ফিরে ডিবি গ্রেফতার করে এই চক্রের সমন্বয়কারী নুরুল ইসলামকে, যিনি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মার্কেটে রেকি করেন এবং চুরি শেষে সেই মোটরসাইকেলে করে আসামিদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, চক্রটি এর আগেও ২০২১ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটে সোনা চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতারদের একজনের স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন এবং সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি সোনা, বাকিটা কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবি জানায়, দোকান মালিক দাবি করেছেন তার দোকানে মোট ৫০০ ভরি সোনা ছিল। তবে উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি। বাকি সোনা কোথায় আছে, তা জানতে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। একজন আসামি এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে বাকি সোনার অবস্থান জানা যাবে বলেও জানান ডিবির অতিরিক্ত এই কমিশনার।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, চুরি হওয়া সোনা এখনো বিক্রির পর্যায়ে যায়নি। কিছু অংশ গলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে, যেখানে দোকানের ট্যাগ এখনো লেগে আছে। বিক্রির আগে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ডিবি প্রধান বলেন, চক্রের সদস্যরা সাধারণত কৃষিকাজ ও গরুর ফার্মে কাজ করার পরিচয়ে এলাকায় অবস্থান করতেন। কিন্তু গোপনে পরিকল্পিতভাবে বড় ধরনের চুরির প্রস্তুতি নিতেন। সুযোগ পেলেই সোনা বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতেন।