আজ ৩৬ জুুলাই মঙ্গলবার (৫ আগস্ট)। ২০২৪ সালের এদিন ছিল সোমবার। এক বছর আগে এই দিনে শেখের বেটি পালায় না খ্যাত স্বৈরাচার শাসক হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভয় পেয়ে জীবন বাঁচাতে কার্গো বিমানে করে বাংলাদেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পলায়ন করেছিলো। তবে তিনি স্বপদে টিকে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এই দিনে জাতি তাকে ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ১৭ বছরের শাসনামলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছেন। খুন গুম আর রক্তে পিচ্ছিল করেছেন রাজপথ। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মানুষ খুনে লিপ্ত ছিলেন। শেখ হাসিনার পলায়নের পরও মানুষ খুনে লিপ্ত ছিল স্বৈরাচারের দোসর পুলিশ বাহিনী। একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই চিত্র। তাতে বলা হয়, ‘মার্চ অন ঢাকা’ থামাতে, বিক্ষোভকারীদের শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছাতে বাধা দিতে তখনো পুলিশ অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলী চালাচ্ছিল। পুলিশের একজন কমান্ডার ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘সেদিন সকাল থেকেই সেনাবাহিনী জানত, শেখ হাসিনার পতন হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ জানত না। তাই, পুলিশ তখনো সরকারকে রক্ষা করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল। টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচত্যত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লংমার্চ টত ঢাকা’ কর্মসূচি পালিত হয়। কারফিউ ঘোষণা থাকায় সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। সকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পুলিশের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে ও গুলী চালায়। সকাল ১০টার পর থেকেই উত্তরা এবং যাত্রবাড়ী দিয়ে ঢাকায় ঢতকতে শুরু করে হাজারো মানুষ। দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনার পতনের কথা শোনা যায়। দুপুর পর রাজপথগুলো গণজোয়ারে পরিণত হয়।

সেদিন ঢাকাকে ঘেরাও করার জন্য সারাদেশ থেকে মানুষ চলে আসে। যে যেভাবে সম্ভব ছিল আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে চলে আসে আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া পয়েন্টগুলোতো। যেমন রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ি, সাভারসহ রাজধানীর অন্তত ১০ টি পয়েন্টে। সেখানে নির্বিচারে গুলি করে পুলিশ এবং র‌্যাব। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র তারা নিজ দেশের জনগণের ওপর প্রয়োগ করে নির্দিধায়। লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তারা হাসিনার স্বৈরাচারকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করে।

জাতিসংঘের তদন্ত সংস্তা ওএইচসিএইচআর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলী করার ঘটনা নথিভতক্ত করে। সংস্থাটির তদন্ত বলছে, সব কটির ধরন ছিল একই। উদাহরণস্বরূপ, চানখাঁরপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা ও অন্যান্য পুলিশ রাইফেল থেকে প্রাণঘাতী গুলী করেছে। তবে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করা বিক্ষোভকারীদের থামাতে তারা কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পুলিশ যাকে দেখেছিল, তাকে লক্ষ্য করে গুলী চালাচ্ছিল। রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে বাড্ডায় যাওয়ার চেষ্টাকালে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ধাতব গুলী ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীরা আহত হন। ওই এলাকায় সকালে গুলীতে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রজধানীর উত্তরার আজমপুরে পুলিশের গুলীতে আহত ১২ বছর বয়সী এক বালক বলেছে, পুলিশ ‘সব জায়গায় বৃষ্টির মতো গুলী চালাচ্ছিল।’ কীভাবে সে ওই স্থানে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখেছিল, সেই বর্ণনা করেছিল।

সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত ও আটক করতে প্রাথমিকভাবে তল্লাশিকেন্দ্র (চেকপোস্ট) বসিয়েছিল। যখন আরও বেশি বিক্ষোভকারী দেখা যায়, তখন অন্তত প্রথম দিকে পুলিশ কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। পরে প্রাণঘাতী গুলী ছোড়ে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী অন্যান্য আহত বিক্ষোভকারীদের সাহায্য করতে গিয়ে ধাতব গুলীতে আহত হন। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলী চালান।

সাভার বাসস্ট্যান্ডের আশপাশে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলী চালায়। এতে বিপুলসংখ্যক হতাহত হন। একজন সাংবাদিক এলাকাটির বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারা তাকে বলেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের জোর করে মোতায়েন করেছেন। কিন্তু সেই সাধারণ পুলিশ সদস্যরা আরও হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চাননি। ওই এলাকায় গুলী চালানোর ঘটনার আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শীও একটি ছেলের লাশ দেখেছেন। ছেলেটি ৫ আগস্ট নিহত হয়েছিল। এই প্রত্যক্ষদর্শী ওএইচসিএইচআরকে বলেছেন, ৫ আগস্ট ছিল ‘আমাদের (বিক্ষোভকারীদের) জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন, কিন্তু ছেলেটির মায়ের জন্য সবচেয়ে দুঃখের দিন।

ওই এলাকায় মোতায়েন সেনা ইউনিটগুলো বিকেলের দিকে অল্প সময়ের জন্য পরিস্থিতি শান্ত করলেও পরে তারা সরে যায়। কিছতক্ষণ পরে থানার ফটকের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের ওপর একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তারপর রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলী চালায়।

ভিডিও প্রমাণসহ সাক্ষীর সাক্ষ্যে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বাঁচার উপায় খুঁজতে গিয়ে বা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কিছত নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীকে কাছ থেকে গুলী করে হত্যা করেছেন। পুলিশ জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলী চালাচ্ছিল।

৫ আগস্ট বিকেলে যখন জনতা শেখ হাসিনার বিদায় উদ্যাপন শুরু করেছিলেন, তখনো কিছত পুলিশ তাদের ওপর প্রাণঘাতী গুলী ছতড়ছিল। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও চিকিৎসার নথিতে এই বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে যে উত্তরায় মা-বাবার সঙ্গে ‘বিজয় মিছিলে’ আসা ৬ বছর বয়সী একটি ছেলেকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছিল। হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভিডিও ও ছবিতে আনন্দের মুহূর্তগুলো দেখা যায়। তবে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলীর শব্দে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার ফলে জনতা পালিয়ে যায়। শিশুটির ঊরুতে গুলী লেগেছিল। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে সে মারা যায়। শিশুটিকে কে গুলী করেছে, তা দেখতে পাননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী একটি বিশৃঙ্খল দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছিল। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। কাছাকাছি একটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্টেশন ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি অন্যান্য লোকজনকে আহত হতে, রাস্তায় পড়ে যেতে দেখেছেন। এর মধ্যে মাথায় গুলীবিদ্ধ আরেকটি ছেলে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, মিরপুরে উদ্যাপনকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলীতে ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে নিহত হয়। ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরে ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলেকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলী করে পঙ্গু করা হয়েছিল। ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার বিক্ষোভকারীর মূলত একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করার সময় তার ডান হাতে গুলী করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা নিরস্ত্র ছিলেন। তারা কোনো গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেননি। নিরাপত্তা বাহিনী কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলী চালাতে শুরু করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। আনসার ফটকের কাছের রাস্তা অবরোধকারী জনতা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যান। ফরেনসিক প্রমাণে দেখা যায়, ছেলেটিকে শটগানের পেলেট দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলী করা হয়েছিল। পাথর নিক্ষেপের অভিযোগে তাকে শায়েস্তা করার লক্ষ্য ছিল বন্দুকধারীর। তিনি বলেছিল, ‘ততমি আর পাথর ছতড়তে এই হাত ব্যবহার করতে পারবে না।’ ভতক্তভোগীর ডান হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৪০টির বেশি শটগানের পেলেট বিদ্ধ হয়। হাড় ও কোষের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়।

আরেকটি ঘটনা ঘটে গাজীপুরে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা একজন নিরস্ত্র রিকশাচালককে আটক করে তাকে খুব কাছ থেকে গুলী করে হত্যা করেন। পুলিশ লাশটি টেনে নিয়ে যায়। তারা সেই লাশটি আর ফেরত দেয়নি। পরিবার তাদের প্রিয়জনকে দাফন করতে, শোক পালন করতে পারেনি। ওই রিকশাচালককে গুলী করা পুলিশ কর্মকর্তাকে গত সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভতক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারের এক সদস্য ওএইচসিএইচআর-এর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি ন্যায়বিচার, স্বাধীন তদন্ত ও লাশ ফেরত চাই।

৫ আগস্ট বিকেলে বিক্ষোভকারীরা আশুলিয়া থানাকে নিশানা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিপুলসংখ্যক জনতা থানা ঘেরাও করে। পুলিশ বার বার পিছত হটার চেষ্টা করলেও তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে অগ্রসর হতে থাকে। জবাবে পুলিশ প্রাণঘাতী গুলী ভর্তি সামরিক রাইফেল ব্যবহার করে নির্বিচার গুলী চালায়। পুলিশ যখন নিজেদের সরে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল, তখন এলোপাতাড়ি গুলী চলছিল। বিশেষভাবে সহিংস ব্যক্তিদের নিশানা করার পরিবর্তে জনতাকে ভয় দেখানোর জন্য তা বেশি করে করা হচ্ছিল বলে মনে হয়। এর ফলে বিক্ষোভকারী ও পথচারীদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ১৬ বছর বয়সী এক ছাত্রকে খুব কাছ থেকে গুলী করা হয়, তার মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত লেগেছিল, তাকে অবশ করে দেয়। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ পরে গুলীবিদ্ধ লাশগুলো একটি ভ্যানে স্তূপ করে। তারা গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল, তারা কাজটি করেছে এই আশায় যে, লাশ পোড়ানোর বিষয়টি এই মিথ্যা ধারণা তৈরি করবে যে, এসব লোক আন্দোলনকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন।

আসলে সেদিনের সকাল আর বিকালবেলাটা ছিল আলাদা চিত্র। সকাল বেলা ছিল আন্দোলন মূখর। আর বিকাল বেলাটা ছিল আনন্দমূখর। সকালবেলার বর্ণনাটা ছিল এরকম। দুপুর হতে থাকে আর পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। মৃতত্যর মুখে বীরবিক্রমে স্বৈরশাসকের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অকততোভয় লাখ লাখ মানুষের বিজয়ের দিন। দুপুরে কার্গো বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে স্বৈরাচার পতনের অফিশিয়াল খবর নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে ঘোষণা আসে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের। এরপর জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার আছড়ে পড়ে গণভবন ও সংসদ ভবনে। বাদ যায়নি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরও। পলাতক প্রধানমন্ত্রীর শোবার বিছানা থেকে শুরু করে রান্নাঘর-সর্বত্র ছিল বিক্ষতব্ধ জনতার সরব উপস্থিতি।

৫ আগস্ট সকালে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা থানা ও এর কর্মকর্তাদের রক্ষায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলী করার নির্দেশ পান। তারা থানার ভেতর এবং আশপাশে অবস্থান নিয়ে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীর ওপর প্রাণঘাতী রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলী চালায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট ঢাকার ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলীতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়। ঘটনার সময়কার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ৩০ জন নিহতের কথা বলা হয়েছিল। বিবিসির তদন্তে ওই হত্যাকাণ্ড কীভাবে শুরু ও শেষ হয়, সে বিষয়ে নততন তথ্য পাওয়া গেছে। একই ঘটনার চিত্র পাওয়া যায় মেডিকেলগুলোতে। ৬ আগস্ট সকাল পর্যন্ত হতাহতের স্তুুপ ছিল হাসপাতালগুলোতে।

বাংলাদেশ পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, গত বছরের জুলাই ও আগস্টের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিচারের অপেক্ষায় থাকা এসব ঘটনার মধ্যে কিছত ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে যুক্ত থাকার দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ পুলিশ এই সব বিষয়ে নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্ত করছে। অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে যে, পাঁচই অগাস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিকেল তিনটা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলী চালাচ্ছিলো পুলিশ।

এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। বিকেলে পুলিশের নির্বিচার গুলীর ঘটনার পর আহতদেরকে আশেপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা বহু ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, গত গ্রীষ্মে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমোদন তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।