এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সে হিসাবে এবার ১ হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি এক মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানানো হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এতে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৫২টি পূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরে সাতটি পূজা বেশি হবে। আজ শনিবার শারদীয় দুর্গাপূজার বোধন। আগামিকাল রোববার মহাষষ্ঠী। সোমবার মহাসপ্তমী। মঙ্গলবার মহাষ্টমী। বুধবার মহানবমী। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। সেদিন বেলা তিনটায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এবার দেবীর আগমন গজে, গমন দোলায়। দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপ কিংবা প্যান্ডেলে দুটি দাবি তুলে ধরতে বলা হয় লিখিত বক্তব্যে হয়। এক. সারা দেশে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃত্ব ও নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে অসত্য ঢালাও ভিত্তিহীন হয়রানিমূলক মামলা পূজার আগে প্রত্যাহার। দুই. সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক পদচ্যুতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। দাবিগুলো হলো সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যর্পণ। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সব সংস্থায় অংশীদারিত্ব-প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন। বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করাসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন। হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমীÑতিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।

সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে পূজার আয়োজন-উদ্যাপনে স্থানীয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ত করা। ২ অক্টোবর যথানিয়মে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করা। দুর্গম এলাকায় পূজার আয়োজন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে আয়োজকেরা স্থির করবেন।

উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো, পিএসেট-আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগেÑএমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং-ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে, প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও উপদেষ্টা আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বক্তব্য দেন।