ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলী বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ র‌্যালি করেছে বিএনপি। র‌্যালি-পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি নেতারা মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশী জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে। তারা বলেন, ইসরাইলী বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার। তারা বলেন, ইসরাইলকে প্রতিহত না করলে ধীরে ধীরে তারা মুসলিম বিশ^কে ধ্বংস করে দিবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দেশের অন্যান্য মহানগরেও একই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি। র‌্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র‌্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘ইসরাইলী পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও-লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর বিএনপির ঘোষিত এ কর্মসূচিতে সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই জনতার ঢল নামে এদিন। মিছিলের অগ্রভাগ যখন মগবাজার পৌঁছায় তখনো এর শেষপ্রান্ত নয়াপল্টনে ঠায় দাঁড়িয়েছিলো। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা, মাথায় কালেমায়ে তৈয়েবার কালো ব্যান্ড ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।

র‌্যালি-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরাইল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরাইলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরাইলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরাইলী বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরাইলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়Ñ পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকা- চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল-মত নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয় একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর সঞ্চালনায় র‌্যালি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।