গাজায় ইসরাইলী নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী জামায়াতে ইসলামী দক্ষিণের উদ্যোগে বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের পক্ষ থেকে মহাখালী চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করা হয়। এছাড়াও সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বিক্ষোভ করা হয়। এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানানো হয়।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পরিবর্তে নতুন সংঘ গঠিত হতে পারে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জাতিসংঘের নিরব ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। মুসলমানদের হত্যা করা হলে কোন মানবাধিকার থাকে না! বিশ্ব মোড়লেরা মুসলমানদের মানুষই মনে করে না। তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ গর্জে উঠলে কেউ রক্ষা পাবে না। ইসরাইলীকে ছিন্নভিন্ন করতে না পারা ইসলামী রাষ্ট্র নেতাদের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২ শত কোটি মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে যারা রয়েছে ইহুদিদের প্রতি তাদের আনুগত্যশীলতা প্রকাশ পাচ্ছে। বিজাতী, বিধর্মীদের প্রতি নতজানু নীতি পরিহার করে ইসলামী আদর্শে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রধান এবং ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, মানবতাবিরোধী নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া। নেতানিয়াহুর নিদের্শে ফিলিস্তিনের যত বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে জাতিসংঘ চুপ করে বসে রয়েছে। অনতিবিলম্বে জাতিসংঘ কর্তৃত ইসরাইলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

ফিলিস্তিনের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শুধু পতাকা উত্তোলন নয়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে কঠোর জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। তিনি বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা এবং আস্থার এক মহান ব্যক্তি। তাই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসরাইলে হামলা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহন করার আহ্বান জানান নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ না করলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইসরাইলের নাম মুছে দিতে হবে। এজন্য ২ শত কোটি মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কান্না জড়িত কন্ঠে নূরুল ইসলাম বুলবুল বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বোমার আঘাতে মানুষের দেহ যখন ছিন্নভিন্ন হয়ে বাতাসে উড়ে জমিনে পড়ে সেই দৃশ্য কোন মানবতার অন্তভূক্ত। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্ববাসীকে মূল্যায়ন না করে, মানুষ হিসেবে বিশ্বের সকল মানুষকে সমান মূল্যায়ন করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ইহুদী গোষ্ঠী আশ্রয়ের জন্য আরব ভূখন্ডে এসেছে। মুসলিমরা দয়া দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দেওয়ার পর তারা ইসরাইলী রাষ্ট্র গঠন করে ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমেরিকার মদদে ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে। তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, মুসলিম উম্মাহ যখন ঈদুল ফিতরের উৎসবে ঠিক সেই সময় সন্ত্রাসী ইসরাইল গোষ্ঠী ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনের উপর এমনভাবে হামলা চালিয়েছে, লোকজনের লাশ পাখির মতো আকাশে উড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে জমিনে পড়েছে। এমন নিকৃষ্টতম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে লংমার্চ করার প্রস্তুতি নিতে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইলী সন্ত্রাসী কায়দায় ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের রাফাহ্ শহর নিঃশেষ করার প্রতিবাদে মুসলিম উম্মাহর উচিত ইসরাইলকে নিঃশেষ করে দেওয়া। ইসরাইলের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে পারলে ইসরাইল দুর্বল ও নিঃশেষ হয়ে যাবে। এজন্য তিনি, ইসরাইলের সকল পণ্য ইসলামী রাষ্ট্র গুলোতে বয়কট করার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ২০২৩ সালের ০৮ অক্টোবর থেকে ইসরাইল, ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে এই পর্যন্ত ৬১ হাজার বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ইসরাইলের পণ্য বয়কট করার মাধ্যমে সন্ত্রাসী ইসরাইল গোষ্ঠীকে দুর্বল করতে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। ইসরাইলের বিরুদ্ধে জেহাদ করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। জাতিসংঘের নিরব ভূমিকা মুসলমানদের ব্যথিত করছে। তিনি সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. শামছুর রহমান বলেন, ইসরাইল কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম ঘটনা। তিনি বিশ্বের মোড়লদের মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, ড. মোবারক হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরীর নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে শেষে জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সহ হাজার-হাজার তৌহিদী জনতা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয়নগর হয়ে শান্তি নগর মোড় গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মাধ্যমে কর্মসূচি সম্পন্ন করে।

ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশ

ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলী হত্যা ও নিধনযজ্ঞ আইয়্যামে জাহিলিয়াতের নির্মমতা ও বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

গতকাল সোমবার বিকেল ৪ টায় রাজধানীর মহাখালী চৌরাস্তায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইলী বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও উপর্যপুরি বিমান হামলার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বর্বরোচিত হামলা বন্ধের দাবিতে এক বিক্ষোভ পূর্ব বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।বিশাল বিক্ষোভ মিছিলটি মহাখালী ওভারব্রিজ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মগবাজার হাতিরঝিল মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত পথ সভার মাধ্যমে শেষ হয়। সামাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত,শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মুহিবুল্লাহ,জামাল উদ্দীন,ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার,নাসির উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান,জননেতা অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, ছাত্রনেতা আনিসুর রহমান, সালাহ উদ্দিন প্রমূখ।

ড. মু. রেজাউল করিম বলেন, জায়নবাদী ইসরাইলীরা সকল প্রকার আইন-কানুন, নীতি- নৈতিকতা ও যুদ্ধ বিরতি চুক্তি লংঘন করে উপর্যুপরি বিমান হামলার মাধ্যমে পুরো গাজা নগরীতে ধ্বংসের শহর ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। তারা প্রতিনিয়ত মানবতাবিরোধী অপরাধ করে প্রমাণ করেছে ইসরাইল কোন রাষ্ট্র নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যের অবৈধ ও সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র। তাদের এ বর্বরতা ও নির্মমতা ইতিহাসের সকল নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। তাই মুসলিম উম্মাহ তাদের এমনহত্যাযজ্ঞ ও নির্মমতাকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বরং মধ্যপ্রাচ্যের দুষ্টক্ষত ইসরাইলী দখলদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি অবিলম্বে গাজায় ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানান। অন্যথায় মুসলিম বিশ্ব ঘরে বসে তামাশা দেখবে না।

তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলী দখলদার বাহিনী যা করছে তা কোন যুদ্ধ নয়; বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী, শিশু, বৃদ্ধ সহ বেসামরিক স্থাপনাও। এমনকি হাসপাতাল ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানও তাদের জিঘাংসা থেকে মুক্ত থাকেনি। তাই সময় এসেছে ইহুদীদের পণ্য বর্জনের। শুধু তাদের পণ্য বর্জন করলেই চলবে না বরং যেখানে ইহুদী দেখা যাবে সেখানেই তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মুসলিম উম্মাহর নতুন প্রজন্মকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইহুদীবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ না হলে মুসলিম যুবক- যুবতিরা ইসরাইল অভিমুখে মার্চ করে অবৈধ ইসরাইলীকে গুঁড়িয়ে দিতে বাধ্য হবে। তিনি দখলদার ইসরাইলী বাহিনীকে অস্ত্র সহ যেকোন ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় কথিত ইসরাইলেদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে।