বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য দৈনিক ইত্তেফাক ও মানবজমিন পত্রিকায় বিকৃতভাবে প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবৃতি দিয়েছেন।

গতকাল রোববার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ২২ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের দিন গণভোট হলে নির্বাচনের জেনোসাইড হওয়ার আশঙ্কা আছে।’ কিন্তু দৈনিক ইত্তেফাক ও মানবজমিন ইচ্ছাকৃতভাবে ওই বক্তব্য থেকে ‘নির্বাচনের’ শব্দটি বাদ দিয়ে কেবল ‘জেনোসাইড’ উল্লেখ করেছে। এর ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি এই বিকৃতি ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের অন্যান্য পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একই বক্তব্য দৈনিক নয়া দিগন্ত, আমার দেশসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে হুবহু ও যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমীরে জামায়াতের উক্ত বক্তব্যের ভিডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, যা যে কেউ দেখে বাস্তব বিষয়টি যাচাই করতে পারবেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, দৈনিক ইত্তেফাক ও মানবজমিন জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য বিকৃত করেছে, যা অনৈতিক, অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, পত্রিকাদ্বয় অত্র প্রতিবাদ বিবৃতিটি যথাস্থানে প্রকাশ করে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করবেন এবং যথাযথভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে নিন্দা : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ‘গত দশ বছরে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী কোনো ভূমিকা রাখেনি’ বলে যে মন্তব করেছেন তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবৃতি দিয়েছেন।

গত শনিবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের একজন অন্যতম বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। জাতি তাঁর নিকট থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ ধরনের অসত্য ও মনগড়া বক্তব্য আশা করে না। ‘গত ১০ বছরে জামায়াতে ইসলামী দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন করেনি’ মর্মে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল- ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পেটুয়া বাহিনী আন্দোলনরত জনতার উপর জুলুম-নির্যাতনের যে স্টিমরোলার চালিয়েছিল; জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সাথে নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাজপথ মুক্ত করেছিল। এ সময় ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ ঢাকার রাজপথে আন্দোলনরত নিরীহ ছাত্রজনতার উপর ভয়াবহ পৈশাচিক হামলা চালিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সাথে নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতি গড়ে তুলেছিল।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনসংগ্রামে জামায়াতে ইসলামী কারো সাথে আপস করেনি। জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী ছিল। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন শীর্ষ নেতাকে সাজানো ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে এবং আরও ৫ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারের নামে প্রহসন করে কারাগারে বন্দি রেখে তিলে তিলে হত্যা করে।

অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে প্রায় দীর্ঘ ১৪ বছর মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছিল। তিনি দীর্ঘ কারাভোগের পর আইনি লড়াই করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে জনতার মাঝে ফিরে এসেছেন।

দেশবাসী যেখানে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে, সেখানে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির পরিবর্তে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে বিভেদ সৃষ্টি কারো কাম্য হতে পারে না।