কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে গত ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়েছে শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
তবে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ আদানির প্রথম ইউনিট আন্তঃদেশীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়। সন্ধ্যায় ৭টা পর্যন্ত ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এই ইউনিটটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালু হতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হবে। আদানির একটি সূত্র বলছে, অন্য ইউনিটটির কারিগরি ত্রুটি মেরামতের কাজ করছে তারা। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
পিডিবির (উৎপাদন) জহুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোয়া ৬টায় গ্রিডে যুক্ত হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গ্রিডে এসেছে ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ধীরে ধীরে এই সরবরাহ বাড়তে থাকবে।’
এর আগে পিজিসিবির উপ ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম বদিউজ্জামান জানান, ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের প্রথমটি গত ৮ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইউনিটটি গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কারিগরি ত্রুটি রয়েছে বলে জানান তিনি।
পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে রোববার লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের রাষ্ট্রীয় সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড পিএলসি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এটি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। ৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন আর কোনো বিদ্যুৎ আসছে না। আজ শনিবার সন্ধ্যায় একটি ইউনিট চালু করার কথা রয়েছে।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও পিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি। গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করে পিডিবি। গত মার্চের শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা।
পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম আছে। বেলা একটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ সময় ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আগামীকাল লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম জানান , বিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে আদানি। প্রথমে বন্ধ হওয়া ইউনিট দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে। ঘাটতি মেটাতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। জ্বালানির সরবরাহ পাওয়া গেলে চাহিদামতো উৎপাদন করা যাবে।
আদানি প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পরে পিজিসিবির তথ্য থেকে জানা যায়, জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি আজ শনিবার প্রায় ৫০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যার কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। চালু না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।
পাওয়ার গ্রিড কম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বিকেল ৩টা নাগাদ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় সরবরাহ দেওয়া হয় ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে এ সময় ঘাটতি ছিল সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট।
৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন আর কোনো বিদ্যুৎ আসছে না। শনিবার সন্ধ্যায় একটি ইউনিট চালু করার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে রবিবার লোডশেডিং আরো বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি।
শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম আছে। তবে কাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস শুরু। এ দিকে দেশে তীব্রভাবে বেড়ে গেছে গরম। এ পরিস্থিতিতে আদানির কেন্দ্র চালু না করা গেলে দেশে লোডশেডিং বড় আকারে বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।