প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য দূর করে সমান সুযোগ ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি, বেতন–ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে জানানো হয়, অতীতে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের প্রায় ৭৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হলেও অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের মাত্র ৭২ জন কর্মকর্তা এই সুযোগ পেয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রকৃতপক্ষে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এমনকি যাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধায় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যা প্রশাসনিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করেছে। কমিশনের সুপারিশে তিনটি পৃথক সরকারি কর্মকমিশন গঠন এবং হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে আলাদা করার বিষয়টি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেওয়া হয়।
এ ছাড়া উপসচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ না রেখে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য অর্ধেক পদ সংরক্ষণের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, উপসচিব পর্যায়ে কোটা প্রথা বাতিল করে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা মনে করেন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাব ও কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের কারণে সিভিল সার্ভিসে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। এই বৈষম্য দূর করতে হলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষা সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী এসব কলেজের স্বকীয়তা ও মান রক্ষার জন্য অনুমাননির্ভর বা পরীক্ষামূলক কোর্স পরিচালনা না করে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।