মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইন, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে: ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিল গত ৭ আগস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসী আটক রাখার আইন বাতিল করেছে। এর আগে ওই আইন অনুসারে, যারা গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত বা ‘বিশেষভাবে বিপজ্জনক’ তাদের ৯০ দিনের বদলে ২১০ দিন (সাড়ে সাত মাস) পর্যন্ত আটক রাখার সুযোগ থাকতো। কিন্তু সাংবিধানিক আদালত এই বিধানকে সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা করেছে এবং জানিয়েছে, কাউকে এত দীর্ঘ সময় আটক রাখা যাবেনা। তাই আটকের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৯০ দিনেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ফ্রান্সে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশী বসবাস করে। যাদের মধ্যে অনেকেই অনিয়মিত অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি আটক বাড়ানোর প্রস্তাবের ফলে কমিউনিটিতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এই আইনের বাতিলের পর তারা এখন কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে।
২০২৪ সালে ফ্রান্সে প্রায় ৪০ হাজার অভিবাসী প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে ছিল। দীর্ঘমেয়াদি আটক মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কিত বিষয়। সাংবিধানিক কাউন্সিলের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কাউকে এমনভাবে আটক রাখা যাবে না যা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মর্যাদা হরণ করে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো কঠোর আইন প্রণয়নের পক্ষে ছিলেন। ২০২৪ সালে প্যারিসে এক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত এক বিদেশি দীর্ঘদিন ডিটেনশন সেন্টারে থাকার পরও ফ্রান্স ছেড়ে যেতে পারেননি। এই ঘটনার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদি আটক সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন।
মানবাধিকার সংগঠন লা সিমাদ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল ফানেলি কারে-কন্তে বলেন, এই রায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যারা এই আইন পাশ করেছিলেন তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আইন কোনোভাবেই মানুষকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক নেতা মনে করেন এই রায় জননিরাপত্তাকে দুর্বল করছে। তাদের বক্তব্য, ফ্রান্সের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনেক বেশী সময় আটক রাখার বিধান রয়েছে।
ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিলের রায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হবে এবং আটক রাখার সময়সীমা ন্যায্য ও সীমিত হতে হবে।