জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্যু অব্যাহত রাখলে তাদের পরিণতি পতিত হাসিনার মতো হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
পোস্টে হাসনাত লেখেন, জনদুর্ভোগ ও ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত করার ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত সচিবালয়ের ক্যু সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পাঁচ আগস্ট পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করে, হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে অফিস করা সচিবালয়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্যু অব্যাহত রাখলে তাদের পরিণতি পতিত হাসিনার মতো হবে। পোস্টে তিনি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং, সাবধান! হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৬ মে) ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখান থেকেই তারা ঘোষণা দেন- আজকের মধ্যে অধ্যাদেশটি বাতিল করা না হলে সচিবালয় অচল করে দেয়া হবে। এর আগে, গত তিনদিন ধরে চলা আন্দোলনে নতুন অধ্যাদেশ জারি না করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় অধ্যাদেশ জারি করা হলে একে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে প্রত্যাহারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দরে চলমান আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, সচিবালয়, এনবিআর কিংবা পোর্টে যারা স্ট্রাইক করছেন, তাদের বলছি, বিপ্লব ওখানেও হবে।
সোমবার বিকালে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। হান্নান মাসউদ লেখেন, ‘আজ সচিবালয়, এনবিআর কিংবা পোর্টে যারা স্ট্রাইক করছেন, তাদের বলছি, বিপ্লব ওখানেও হবে। আপনারা দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বাধীনতা চাচ্ছেন, কিন্তু চব্বিশ-পরবর্তী সময়ে এটা আর পাবেন না। হাসিনার পুরো শাসনামলের প্রতিটি গুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচারÑসবকিছুর সহযোগী আপনারা। ভাববেন না, পার পেয়ে গেছেন। পুনশ্চ বলছি, পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব দুর্নীতিগ্রস্তদের অপসারণ করে, নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।’
এর আগে সকালে চট্টগ্রামে দলের এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, কর্মচারীরা সরকারের কাজে বাধা দিলে, হুমকি দিলে জনগণই তাদের বিকল্প খুঁজে নেবে। সংস্কারে বাধা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের সহজে ও কম সময়ে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গতকাল রাতে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা দেখেছি পুলিশ টাকা ছাড়া কাজ করে না। গত ১৭ বছরে ডিমলার রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লুটপাট করা হয়েছে। সোমবার বিকালে নীলফামারীর ডিমলা শহীদ মিনার চত্বরে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যাদের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে তাদের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সময় বিবেচনায় একাধিক শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। যখন দেশে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকবে তখন দলগুলোর মধ্যে ভালো কাজ করার প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
যদি এক থেকে দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল থাকে তখন জনগণের হাতে অপশন কম থাকে। একবার একজন পরে আরেকজন ঘুরে ফিরে আসে। নির্বাচন পদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা মনোনয়নের কালচার দেখেছি, মার্কার কালচার দেখেছি। যখন ক্ষমতাসীন দলে একটি মার্কা পায় প্রশাসন তাকে জোর করে জিতিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার করতে হবে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই তবে সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না হলে সরকারি দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। এ সময় বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাসের খান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ফারজানা দিনা ও আসাদুল্লাহ আল গালিব, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ওয়াসিস আলম।