বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) রাজধানী শাখার ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৩ হতে ২০২৪-২০২৫ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এবং মূল বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল আজিজ।

প্রধান অতিথি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষের নতুন নতুন বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। দেশে ইংরেজি বই আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ২০০ ভাষায় দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১ম ২০টা ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার স্থান। অথচ একসময় ৫-৭টি ভাষার মধ্যে ১টি ছিল। ১৯০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষা কিছু কিছু অঞ্চলের ভাষার তুলনায় কিছু এগিয়ে গেলেও সার্বিকভাবে ভাষার বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপনা, সৃজনশীলতা ও শক্তি তুলনামূলকভাবে কমেছে। এমতাবস্থায় এই ভাষায় বিশ্বমানের বই বের করতে ভালোবাসা ও মনোযোগ দরকার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সভ্যতাকে সহায়তা করতে বাপুস সময়োপযুগী আরও বই প্রকাশ করতে পারে। যাতে বাংলা ভাষা আরও সমৃদ্ধশালী ও শক্তিমান হয়ে উঠতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্র থাকছে, তবে রাষ্ট্রকে জীবন ঘনিষ্ঠ হতে হচ্ছে। রাষ্ট্রকে যারাই অবজ্ঞা করছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা এখানে শিখে ইউরোপে, আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায় বা অন্য দেশে যাচ্ছে; সেসব প্রবাসীরাও অনেকে বাংলাকে দেখতে পারে না; এটা আমাদের দুর্বল দিক। অথচ অনেক দেশ কালোদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে না, সরকার তাচ্ছিল্য করছে- তারপরও ঘরকুনো বাঙ্গালি হয়ে গেছে বিদেশমুখী। এমতাবস্থায় বাংলা ভাষার প্রকাশনা শিল্পকে সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে। জ্ঞানের ভুবনকে শক্তিশালী করতে ও আলোকিত মানুষ গড়তে প্রকাশনা শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনৈক্য যাতে না হয়; সেজন্য মানুষের শক্তি ও দুর্বলতা বুঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধান বক্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, বাংলাদেশে পুস্তক শিল্প যত বেশি বিকশিত হবে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার পথ ততবেশি প্রশস্ত হবে। যারা আলোকিত সমাজ গড়ায় কাজ করে প্রকাশক ও বিক্রেতারা হচ্ছে তাদের অগ্রসর মানুষ। দেশের সিভিল সোসাইটি ও শিক্ষিত সমাজকে সাথে নিয়ে প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িতদের অধিকার সুরক্ষায় বাপুসকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বাপুস সদস্যদের সন্তানদের বৃত্তি প্রদান, হেলথ কার্ড করে দেয়া, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, ফ্যামিলি গেটটুগেদার এবং ওয়েলফেয়ার ফান্ডের মাধ্যমে বাস্তবমুখী সাপোর্ট দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ বাড়ায়ে এই শিল্পে নিয়োজিতদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগী হতে হবে। এদেশের দুর্নীতি ও অস্থিতিশীলতার দায় শিক্ষিত সমাজের, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের নয়। তাই অগ্রসররা দায়বোধ শক্ত করে যথাযথভাবে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতি সমৃদ্ধ হবে।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বাপুস'র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি- মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ গোলাম এলাহী জায়েদ, মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, মো. আলমগীর, কাজী শাহ আলম, শেখ আজিজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু সাঈদ এবং কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম। রাজধানী শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নেছার উদ্দিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস.এম. লুৎফর রহমান ও মাহমুদ হাসান বিপ্লব এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এম এ মুসাসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির পরিচালকবৃন্দ এবং রাজধানী শাখার কোষাধ্যক্ষ শিপন চন্দ্র পালসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, থানা শাখাগুলোর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সকল সদস্যবৃন্দ ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।