বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে নির্বাচনের আগেই। সেইসাথে সত্যিকার অর্থে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতা করার আহ্বান জানান সিনিয়র নেতারা। সেইসাথে প্রোক্ল্যামেশেন অথবা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে মনে করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডাভোকেট শিশির মনির।
গতকাল রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। জাতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নিয়ামুল বশির, গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. হামিদুর রহমান আযাদ (সাবেক এমপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার, সাবেক জেলা জজ জনাব ইকতেদার আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান, জাতীয় সংস্কার জোটের আহ্বায়ক মেজর (অব.) আমিন আহমদ আফসারী, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. কোরবান আলী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি জনাব আইয়ুব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার জাতীয় সংস্কার জোট লায়ন মোঃ আবদুল কাদের হেলালী, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, আবদুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ও ড. খলিলুর রহমান মাদানী।
উপস্থাপনা করেন যথাক্রমে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতি আজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কখন যে এই ক্রান্তিকাল শেষ হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আমরা একটা কথা শুনেছিলাম ছোটবেলায় তা হলো যে যায় লংকায় সে হয় রাবণ। আমরা ভেবেছিলাম ৫৪ বছর নেতৃত্বের ব্যর্থতায় দেশ যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল; তার সমাপ্তি ঘটেছিল একজন ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। সেখান থেকে বিপ্নবের চেতনার ফল হিসেবে জাতি আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম তারা কমপক্ষে একটা নতুন যাত্রা শুরু করবে। এখন দেখি ক্ষমতায় বসার পর তারাও রাবনের ভূমিকায়। এটাকি তাদের দুর্ভাগ্য নাকি বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভাগ্য। তবে আমাদের জন্য জাতির জন্য বেদনার। আমাদের জীবন দেওয়া শেষ হয় না। রক্ত দেওয়া শেষ হয়না। আমাদের বিজয়ের পর থেকে আবার সংগ্রামের স্লোগান দিতে হয়। আমাদের রক্ত দিয়ে দেশ মুক্ত করার পরে আবার রক্ত দেওয়ার ডাক দিতে হয়।
তিনি বলেন প্রথম কথা আমরা বলেছি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। আমরা যখন বলি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, উৎসবমূখর, জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। তখন এক পক্ষ বলে তারা নির্বাচন চায় না। তাহলে তারা-ই কি নির্বাচন চায়? তারা কি তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরোধী? রাতের নির্বাচনের পক্ষে? সূতরাং তারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে; যারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দিবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন সেই খেলা আর চলবে না। আমরা বলেছি সংস্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সংস্কার দৃশ্যমান বিচার তারপর নির্বাচন। আমরাতো আপনার কথায় আছি। সংস্কারের জন্য কমিশন করেছেন। এখন এটার বাস্তবায়ন। কিন্তু আপনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। ভালো। তারিখ নিয়ে আমরা দ্বিমত করছি না। তা এগিয়ে ১৩ ডিসেম্বর নিয়ে আসুন। আপত্তি নাই। আপনি-ই বলেছেন সংস্কারের পর নির্বাচন। তাহলে এখন সংস্কার নিয়ে টালবাহানা কেন? আমরা কি ৩০ দিন চড়–্ই বাতি খেলতে গিয়েছিলাম? আমরা সিরিয়াসলি গিয়েছি। আমাদের যদি খেলা খেলা মনে করে যুক্ত করে থাকেন তাহলে ঠিক করেননি। যে যে বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচনের আগেই।
তিনি উল্লেখ করেন, হাসিনা রাতেই নির্বাচন শেষ করেছিলেন। আপনারা ভাবছেন হাসিনার পতনের পর সেই অবস্থায় চলে যাবেন! তা হবে না। কারণ যে জনগণ আপনাদের গদিতে বসিয়েছে সে জনগণ এখনো মরে নাই। অনেকে ভাবছে নির্লিপ্ত হয়ে গেছে। চেতনা নাই। চেতনা আছে। যদি না থাকতো শেখ হাসিনা উসখুসেই ৩২ নম্বর শেষ।
এবার পিআর পদ্ধতি যদি না দেন, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না করেন। এখনকার স্লোগান হলো এই মুহূর্তে দরকার পি আরের সরকার। ওনারা বলে আমরা ডেমোক্রেসিতে বিশ^াস করি। তো পি আরে তো ৭২ ভাগ জনগণের মত আছে। এতেতো গণভোট হয়ে গেছে। কিন্তু আইনী ভিত্তি হয়নি। এজন্য পিআর সংস্কার এবং নির্বাচন কয় তারিখ কবে তাও গণভোটে দেন।
ডা. তাহের বলেন, তারা যখন বলে, ক্ষমতায় গিয়ে করবো তখন আমরা খুব ভয় পাই। আপনারা ক্ষমতায় যাবেন সেই গ্যারান্টি পেলেন কোথায়? এই গ্যারান্টিতো হাসিনা পেয়েছিল। এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। জনমত জরিপের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, সানেমের জরিপ বলেছে বিএনপির ৪২ আমরা ৩২। সবশেষ ব্র্যাকের সার্ভে বলেছে, বিএনপি ১২ আর আমরা সাড়ে ১০। আগে পার্থক্য ছিল ১০ শতাংশ। এখন দেড় শতাংশ। ব্যবধান কমছে।
তিনি সবাইকে একসাথে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন যেভাবে জুলাই মাসে একটি বিপ্লব এসেছে আগামি নির্বাচনে আরেকটি বিপ্লব হবে। শেষ কথায় তিনি বলেন আমরা যারা পিআর চাই সংস্কার চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই, সবাই মাঠে নামুন ঐক্যবদ্ধভাবে। আমরা দাবি পূরণে বাধ্য করবো। তবে আমরা চাই না এতো রক্তপাতের পর উত্তেজনা বাড়াতে। আমরা শান্তি চাই।
প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আপানার কাছে অনুরোধ- নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর সাথে বসেন। আলাপ আলোচনা করেন। একটা রাস্তা বের করেন। সকল দলের প্রতি অনুরোধ আসুন আমরা সকল দল মিলে সত্যিকার অর্থে কাংখিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি সমঝোতায় আসি। উৎসবমূখর একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই বিপ্লবে যেটা পড়া হয়েছে, তার শেষ অধ্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা যা পড়লেন মানিক মিয়া এভিনিউতে সংসদভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে, আগামি নির্বাচনের পর সংবিধানের একটি তফসিলভূক্ত করা হবে। আমি মনে করি আজকের সেমিনার হচ্ছে সেই জুলাই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ। জনগণ এটা মানেনি। অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষনাকে সংশোধন করে আজকের সেমিনারে যত সংশোধনী দেওয়া হয়েছে তা মেনে নিতে হবে। প্রবন্ধকার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন যদি আপনারা না পারেন আমাদের দায়িত্ব দেন আমরা বানিয়ে দেবো। এটা একটি প্রতিবাদ।
তিনি বলেন, একটি দলের বড় বড় নেতারা বলেন, সংসদ ছাড়া কি করে আইন তৈরি করবো। এটা আজব কথা। আইন বিধান সংবিধান অর্ডিন্যান্স লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, ৭০ এ নির্বাচন হয়েছিল। সমস্ত বিধানের কথা বলে গণ আকাক্সক্ষার কথা বলে প্রবন্ধে আপনাদের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন একটি দলের বড় বড় নেতারা বলেন আপনারা যত সংস্কার করেন আমরা সংসদে গিয়ে সব মুছে দিবো। তার বিরুদ্ধে প্রবন্ধ একটি তীব্র প্রতিবাদ। তিনি বলেন আপনারা মনে করবেন না যে আইন কানুন সব আপনাদের আলমারিতে আছে। দেশের মানুষের কাছেও এসব আছে। যদি আপনাদের পাল্টা যুক্তি থাকে তাহলে সর্বদল নিয়ে দেশের সেরা আইনজ্ঞদের নিয়ে গোল টেবিলের আয়োজন করুন। সেখানে যুক্তি উপস্থাপন হউক।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংস্কার না করে বিদ্যমান কাঠমোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনা জন্ম হবে। আরও একটা ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনি একটি জাতীয় বিতর্কে আয়োজন করুন। জাতি জানুক কার কথা ঠিক কাদের বেঠিক।
তিনি নাম উল্লেখ করে বলেন, অধিকাংশ ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করে যেসব দল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি গণ অধিকার খেলাফত আন্দোলন, হেফাজত, মজলিসসহ সব দল বলছে, পি আর ছাড়া কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কিন্তু আপনারা বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখান।
তিনি বলেন, পি আর হলে কালো টাকা মনোনয়ন বাণিজ্য করতে পারবে না। পি আর হলে প্রত্যেকটা ভোটের মূল্যায়ন হবে। আমরা আপার এবং লওয়ার হাউস দুইখানেই আমরা পিআর চাই। বলতে চাই সব সংস্কার প্রস্তাবের আইনী ভিত্তি দিয়ে আগামি নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের ভাগ্যে এক মহাদুর্যোগ অপেক্ষা করছে। তিনি সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এবং ইসলামী শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তা জনগণকে হতাশ করেছে। এই ঘোষণায় ১৮ সাল থেকে কোটাবিরোধী যে আন্দোলন হয়েছে তার কোন উল্লেখ নেই, বিডিআর হত্যা ও শাপলা চত্বরে গণহত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। অতএব প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তা সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে আইনি মর্যাদা দিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, বাংলাদেশের আকাশে চাঁদাবাজ, দখলদার, সন্ত্রাসী, ক্ষুধার্ত শকুনের আনাগোনা দেখা দিচ্ছে। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়। এই সরকার একটি দলের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন। গত ৫৪ বছরেও ভোট ডাকাতি বন্ধ হয়নি, ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাস বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। পিআর পদ্ধতি না হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে সরকার আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপি ৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি। ৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন করেছিলো। প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তা আশাব্যঞ্জক নয়। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পুরনো সংবিধান রেখে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যাবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, গত জুলাই বিপ্লবে ১৬শ লোক শহীদ হয়েছেন, ২০ হাজারের অধিক লোক আহত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা যে জুলাই ঘোষণা পেশ করেছেন তাতে জনগণের প্রত্যাশা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি দলের পরামর্শে চলছে বর্তমান সরকার। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া না হলে বিপ্লব ছিনতাই হয়ে যাবে। ৭১ সালের বিজয় একটি দেশ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এই জুলাই বিপ্লব যদি ছিনতাই হয়ে যায় তাহলে জনগণ ক্ষমা করবে না।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, একটি দল খুব জোর করে বলে, আমাদের সংবিধানের আর্টিকেল সেভেনে জনগণ রাষ্ট্রের যে মালিকানা দিয়েছে, সেটার কথা বলে তারা পাশ কাটাতে চায়। তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিকে প্রয়োজন মনে করছে না। তারা বলে, জনগণের অভিপ্রায় সব আইনের ঊর্ধ্বে। সেটাই যদি হয়, আমি বলবো আপনারা জনগণের অভিপ্রায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এই যে সংস্কারগুলো হয়েছে সেগুলো শুধু আপনাদের বাসায় জেন্টলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট রেখে দিলে জাতির ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে?
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে রূপরেখা তৈরি হয়েছিল, তখন আমাদের সমর্থনে ৯১ তে যারা সরকারে এসেছিলেন, ওনারা সেই রূপরেখা বানচাল করে দিয়েছেন। বাস্তবায়ন করেননি। এখনো একই ষড়যন্ত্র আপনারা করছেন। জেন্টলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট করবেন, আইনিভিত্তি দেবেন না, এটা হবে না। তাই জনগণকে বোকা বানাবেন না, জনগণ আপনাদের গোপন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে আমরা হতাশ। বিডিআর ও শাপলা হত্যার কথা আসেনি। আমরা চাই ঘোষণাটি সংশোধন করা। জুলাই সনদ নিয়ে ২৩ দিন বসা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বাস্তবায়ন কিভাবে বাস্তবায়ন হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। আমাদের বিশ^াস হয় না। অতীতে অনেকেই কথা রাখেনি। আমি মনে করি অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে তা আইনে পরিণত করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশ্রাফ আলী আকন্দ বলেন, জুলাই ঘোষণা সনদে ফাঁক রয়েছে। অসংলগ্ন কথা রয়েছে। আমি ঐকমত্য কমিশনকে বলেছি আপনারা একটি দলের দিকে কথা বলেন। আমরা পি আর নিয়ে কথা বলেছি। ঐকমত্য কমিশন এজেন্ডা আনেনি। পিআর হলে ভোট ডাকাতি করতে পারবেন না। লন্ডন টাকা পাঠাতে পারবেন না। ৭২ ভাগ মানুষ পিআরের পক্ষে আছে। ৯১ দেশে পিআর আছে। কেউ কেউ বলেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। গণভোট দেন। একটি দলের সিনিয়র নেতা বলেছেন, আমরা শরিয়ত মানি না। তাহলেতো মুসলমানিত্বই থাকে না। দেশে চেতনার বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তা বন্ধ করতে হবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র পাবলিশ করা হয়েছে। আশা রাখতে পারিন্।ি ১৬ বছরের ইতিহাস অন্তভূক্ত করেনি। আমরা আস্থা রাখতে পারিনি। ঐকমত্য কমিশন নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা সংবিধানের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তা করতে হলে বড় অংশ পরিবর্তন হয়ে যায়। বাকী আছে মৌলিক অংশ। যাতে একমত হয়েছি তা বাস্তবায়ন হলে সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া উপায় থাকে না। তাতে ফ্যাসিবাদী উপায় থেকে মুক্তি পাবে। আমি আহ্বান জানাই এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের দায়িত্ব মৌলিক সংস্কার করা, ফ্যাসিবাদের বিচার করা, জুলাই ঘোষনা বাস্তবায়ন করা, আইনের স্বীকৃতি দেয়া। নির্বাচনের তারিখকে স্বাগত জানাই। তবে সবার জন্য সমান ফিল্ড করতে হবে। জনগণের দাবি, স্বৈরাচার চিহ্নিত করে বিচার করা। গ্রেফতার করা।
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বাধাটা কোথায়? অধিকাংশ দল বলেছে দিতে হবে। বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী বাধা দিতে হবে। এই আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক শিশু জীবন দিয়েছে। যারা জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে বাধা দেয় তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এই সরকারকেই জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। না হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরে আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, নির্বাচন যেনতেনভাবে করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। জামায়াতে ইসলামী যেনতেন নির্বাচন হতে দিবে না। সরকারকে বলবো প্রোক্লেমেশন নয়তো গণভোট দিতে হবে। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির বলেন, ১৬ বছর পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। কেউ যেন না ভাবে নির্বাচন দেরি হলে আবার ফিরে স্বৈরাচার আসবে। আবার কোন বাহিনীর ক্ষমতা দখলকেও মেনে নিবে না।
জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার জন্য এক বছর কেন লেগেছে? প্রয়োজনে গণভোট দেন। জিয়াউর রহমানের সময় হয়েছে। এখন দিতে সমস্যাটা কি? আমি তো ভারতীয় আধিপত্যবাদ মুক্ত হতে দেখিনা। নতুন স্বৈরাচার হতে দিবো না। বিপ্লব বিকৃত হতে দিবো না। নতুন যুদ্ধ আসতে যাচ্ছে। ঘোষণা দিয়ে দিলাম প্রস্তুত থাকুন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ কোন কোন রাজনৈতিক দল সংস্কার মানতে চাইছে না। এই সরকার ২০ কোটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।