রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়। জানাযায় অংশ নেন হাজারও মানুষ। সেখানে স্বজনদের কান্নায় এক বেদনাবিধূর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন সপুরা ম্যাচ ফ্যাক্টরি মসজিদের ইমাম মাওলানা শাহ নূর বিন সিদ্দিক। জানাজায় বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, পুলিশ কমিশনার মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহানগর আমির ড. কেরামত আলী, সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন ম-ল, রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ প্রশাসন ও নগরীর গণ্যমান্যরা অংশ নেন।

বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে তৌকির ইসলামের লাশ রাজশাহী সেনানিবাসে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় নগরীর উপশহর এলাকায় তৌকিরদের ভাড়া বাসায়। পরে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লাশ নেওয়া হয় জানাযাস্থলে। এর আগে দুপুর ১টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা বিএফ বাশার ঘাঁটিতে ফিউনারেল প্যারেডের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও ভারপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী প্রধানসহ নিহতের পরিবার সদস্যারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জানাজার পরে তৌকিরের লাশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে দাফনের জন্য রাজশাহীতে তার বাড়িতে পাঠানো হয়।

বিকেল ৪টায় নগরীর রাজশাহীর রেলগেটে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যরা স্টেডিয়ামের ভেতরে তাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পান। এ সময় পাইলট তৌকিরের বোন বৃষ্টি খাতুন কান্না ভেঙে পড়ে ‘ও ভাইয়া ও ভাইয়া’ বলে ডাকতে থাকেন। এ সময় তার লাশ গাড়ি থেকে নামানো হয়। বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে ভাইকে সম্বোধন করে বলেন, তুই সকালে একবার কল দিলি না কেন ভাই? একটু কথা কেন কেন বললি না? পরে তাদেরকে র‌্যাব-৫ এর একটি গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার মৃত্যুর খবর শোনার পর তৌকিরের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নেয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় প্রথম জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে তার লাশ রাজশাহীতে নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় রাজশাহী উপশহর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়। এরপর বিকেলে সপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি আরো জানান, তৌকিরের মৃত্যুতে শোকের আবহ পুরো রাজশাহী নগরীজুড়ে। সকাল থেকেই ভাড়া বাসায় ভিড় জমাতে শুরু করেছেন স্বজনরা। তৌকিরের বন্ধু-বান্ধবসহ পরিচিতরা তার রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। জেলা প্রশাসন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দোয়ার আয়োজন করেছে।

জানাযার পূর্বে তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম কথা বলেন। তিনি বলেন, ছেলে আমার অনেক ভদ্র নম্র ছিল। তার আচার ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেবেন। এ সময় তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তহুরুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তবে ২৫ বছর ধরে তিনি রাজশাহী শহরে বাস করেন। তার একমাত্র ছেলে তৌকিরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতেই। তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। বছরখানেক আগে তৌকির বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। প্রশিক্ষণের শেষ ধাপে গত সোমবার একা (সলো) যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন তৌকির। একজন বৈমানিকের জীবনে থাকে এটি বিশেষ দিন। সেদিনই বিমানটি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে তৌকির প্রাণ হারান।

সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। এরপর যানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম যুদ্ধবিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার ‘সর্বাত্মক চেষ্টা’ করেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যবশত’ যানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআর বলছে, দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমান বাহিনী একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে।

রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটির নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তাঁকে নগরীর সপুরা গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় পুলিশ, সেনা ও বিমান বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জামায়াত নেতা জসিমউদ্দিন সরকার, বিএনপি নেতা শফিকুল হক মিলনসহ সেনা ও বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন, রাজনীতিক এবং সাধারণ মুসল্লিরা অংশ নেন। জানাযার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনী পড়ে শোনানো হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান। তহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।’ ডুকরে কেঁদে উঠে তিনি সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। পাশাপাশি মাইলস্টোন স্কুলের এ বিমান দুর্ঘটনায় শিশুসহ আরো যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সবার জন্যই দোয়া চান তহুরুল ইসলাম।

দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে তৌকিরের লাশ রাজশাহী সেনানিবাসে নেয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩টা ২০ মিনিটে সেনানিবাসের পাশেই নগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় তৌকিরের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অসংখ্য মানুষ বাড়ির সামনে ভিড় করেন। বাড়ির সামনে কিছু সময় লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই সেটি জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয় জানাযার জন্য। তৌকির ইসলামের বাবা তহুরুল ইসলাম একজন শিল্প মালিক। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তবে প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি রাজশাহী শহরে বাস করেন। তার একমাত্র ছেলে তৌকিরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতেই। তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। বছরখানেক আগে তৌকির বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। প্রশিক্ষণের শেষ ধাপে সোমবার একা (সলো) যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন তৌকির। একজন বৈমানিকের জীবনে থাকে এটি বিশেষ দিন। সেদিনই বিমানটি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে তৌকির প্রাণ হারান।