আজ ৫ জুলাই শনিবার। ২০২৪ সালে এই দিনটি ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন হলেও বসে থাকেনি শিক্ষার্থীরা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রশাসনের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে। এমনকি ভার্সিটির শিক্ষকরাও ছিল না তাদের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পক্ষে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আনুকল্য পাওয়ার জন্য তারা শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ এবং পুলিশের বর্বর আচরণকেও সহ্য করেছে না দেখার ভান করে। কিন্তু পের খাওয়া শিক্ষার্থীরা নানা কায়দা কৌশল করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। সরকারের রক্তচক্ষুকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অফ লাইন অন লাইন দুভাবেই দাবির পক্ষে জনমত গঠনে প্রচারণা অব্যাহত রাখে। শত চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের অবদমিত করে রাখা যায়নি।
আন্দোলনের অংশীজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইসলামী ছাত্র শিবির জনবল এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচারণা জোরদার করার জন্য, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
বৈষম্য বিরোধী আান্দোলনের সময় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি এবং বর্তমান ঢাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ দৈনিক সংগ্রামের সাথে আলাপকালে জানান জুলাই আন্দোলনে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিবির জনশক্তি খাবার ও চিকিৎসা থেকে শুরু করে বুদ্ধিূ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশলসহ সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তিনি বলেন, একটি মিছিল কোন জায়গা থেকে শুরু হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হবে। এমনকি কোন দিকে গেলে নিরাপদ হবে, স্্েইসাথে কোন দিক দিয়ে পুলিশ অবস্থান করছে সেই ইনফরমেশন পর্যন্ত শিবির সরবরাহ করেছে। তিনি জানান এক্ষেত্রে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া, আখতার হোসেনসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতারা শিবিরের সাথে একদম শুরু থেকে যোগাযোগ রক্ষা করেছে।
৪ জুলাই বৃহস্পতিবারের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চার দফার ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলে। এটা সারাদেশেই সমন্বিতভাবে করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে আমাদের চার দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে, সেভাবেই তা চলতেই থাকবে। এখন পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের কোনো দপ্তর থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি এবং কোনোরকম আশ্বস্তও করেনি। এজন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবেই। শনিবার (৬ জুলাই) সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। রোববার (৭ জুলাই) সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের মতো ধর্মঘট পালন করা হবে।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,আমাদের কর্মসূচি বন্ধ থাকবে না, আমরা অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের চার দফা দাবিকেন্দ্রিক ব্যাপক প্রচারণা চালাবো। শনিবার বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার সারা দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করবো আমরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবেই।’
সমন্বয়কদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মসূচিগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হারে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪ থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে অভিন্ন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বানে একাত্মতা পোষণ করেন। দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যাপক সাড়া ফেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক প্রচার হয়। কোন কোন বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে, ফেসবুকে তার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেন সমন্বয়করা।