তিনদিনের পুলিশ সপ্তাহের শুরু ২৯ এপ্রিল

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ( COMPLAINT CELL) ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি (GRIEVANCE REDRESSAL COMMITTE) , এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা (Compensatory Allowance) প্রদান, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ৬টি দাবি তুলে ধরা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহেই এই দাবিগুলো জানানো হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমেই বর্তমান সরকারের কাছে জনগুরুত্বপূর্ণ ১২ টি দাবি জানানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে ৬ টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়। এসব দাবি উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে ২৯ এপ্রিল। ১ মে শেষ হবে এবারের তিনদিনের আয়োজন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্যভাবে যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা থাকে, সে হিসেবে পুলিশের কাজ কী হবে, তার একটি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড থাকছে না। থাকছে বিভিন্নভাবে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে ৪০ এর মতো বিপিএম-পিপিএম পদক। সপ্তাহের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মো: ইউনূস। তিনিই পদক পরিয়ে দেবেন।

৬ দফা দাবি হচ্ছে: স্বাধীন পুলিশ কমিশন (জনসাধারণের জন্য Complaint Cell ও পুলিশের জন্য Grievance Redressal Committee), এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা (Compensatory Allowance) প্রদান, মৃতদেহের দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি/অফিসিয়িটিং পদোন্নিত প্রদান (কনস্টেবল হতে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)। এর বাইরে আরও ৬ টি দাবি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেসব দাবিগুলো হচ্ছে, পুলিশের যানবাহন বৃদ্ধিকরণ, পুলিশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নারী পুলিশবান্ধব কর্মপরিবেশ বিনির্মাণ, ভূমিবিরোধ, বালু-জল মহাল ও হাট-বাজার ইজারা এবং পরিবেশ আইন সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধসহ বিবিধক্ষেত্রে সৃষ্ট আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ব্যয় সংকোচনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন/নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, ডিজিটালাইজড্ পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তন ও পুলিশের দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নিয়োগের প্রচলন। এসব দাবির মধ্যে ইতোমধ্যে একাধিক দাবি পূরণ হয়েছে, পূরণ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে। যার কারণে এ দাবিগুলো আর পুলিশ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিকতায় উত্থাপন করা হচ্ছে না।

নির্বাচনে ভূমিকা নিয়ে নির্দেশনা থাকবে : পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর তিনি পুলিশ সদস্যদের পদক পরিয়ে দেবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবারই প্রথম সাত দিন নয়, পুলিশ সপ্তাহ হচ্ছে তিন দিনের এবং কোনো প্যারেড রাখা হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতাও নেই। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পত্রিকায় কোনো ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন থাকছে না। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা যাবেন না। আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কোনো সেশন নেই। রেডিও-টেলিভিশনেও থাকবে না বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবিদাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত বছরগুলোতে সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতো। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতাও নেই। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচনে ভূমিকা রাখার জন্য ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হতো। কিন্তু এবারই প্রথম পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর সর্বোচ্চ ৪০০ জনকে পদক দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এখন থেকে সারা বছর পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং তখন থেকেই তাঁরা আর্থিক সুবিধা পাবেন। পরে পুলিশ সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে। এবার পদক সংখ্যা ৪০ এর বেশি হবেনা বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এখন থেকে সারা বছর পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং তখন থেকেই তাঁরা আর্থিক সুবিধা পাবেন। পরে পুলিশ সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।

তিন দিনের অনুষ্ঠান সূচি : পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ নারী কল্যান সমিতির স্টল উদ্বোধন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে প্রনীত কর্মপরিকল্পনার উপর ওয়ার্কশপ হবে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে প্রেজেন্টেশান দেবে। দ্বিতীয় দিনে, পুলিশের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবগনের সম্মেলন হবে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), হাইওয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), রেলওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ–বিষয়ক কর্মকা- সম্পর্কে পৃথক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। পুলিশের প্রতিটি ইউনিট তাদের কর্মকা- ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।

শেষ দিন হবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মতবিনিময় করবেন। বার্ষিক পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলা হবে। নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারন সভা হবে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের সাথে পুনর্র্মিলনী ঘটবে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের।