জুলাই অভ্যুত্থানে আহত চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের মারামারির ঘটনায় তিন দিন ধরে বন্ধ দেশের একমাত্র চক্ষু চিকিৎসার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। বহির্বিভাগের পাশাপাশি অন্তঃবিভাগ, এমনকি জরুরি বিভাগও বন্ধ রয়েছে। অস্ত্রোপচার কক্ষ ও ওয়ার্ডগুলোতে তালা ঝুলছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও বন্ধ রেখেছে সেবা। এতে রোগীদের ভোগান্তি যেন সব সীমা ছাড়িয়েছে।
জরুরি অস্ত্রোপচারের রোগী কাতরাচ্ছের ইমারজেন্সি (জরুরি) বিভাগের বিছানায়। নেই ওষুধ। অবস্থা শোচনীয় ওয়ার্ডে থাকা রোগীদেরও। কোন ওষুধ খেতে হবে, নতুন করে কোনো ইনজেকশন ও ওষুধ খেতে হবে কিনা তাও জানেননা রোগীরা। বন্ধ রয়েছে খাবার প্রদানও। কবে সচল হবে সেই অপেক্ষায় তারা।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও অপারেশন কক্ষে (ওটি) তালা ঝুলছে। একজন চিকিৎসক, নার্স কিংবা ওয়ার্ড বয়ও পাওয়া গেল না। রোগীরা জানান, গত বুধবারের পর থেকে কোনো চিকিৎসক তাদের দেখেননি। অস্ত্রোপচার জরুরি হলেও অর্থের অভাবে বেসরকারিতে যেতে পারছেন না তারা।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তার অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসকেরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ায় আটকে অস্ত্রোপচার। কবে নাগাদ হবে জানেন না এই রোগী। কোনো চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় কেউই নেই।
অন্যদিকে, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে শয্যার অভাবে রোগী ভর্তি করতে বেগ পেতে হয়, সেখানে বর্তমানে পুরো হাসপাতালে সাধারণ রোগী ভর্তি ১০ জন। স্পেশাল ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন রোগীকে দেখা যায়।
জুলাই আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীন নাজমুস শাকিব বলেন, "তিন দিন ধরে পুরো অচল অবস্থা। হাসপাতালে শুধু তো আমরা নই, সাধারণ রোগীও ভর্তি রয়েছে। অনেকের অপারেশন হয়েছে, কেউ অপেক্ষায়। ডাক্তারের কাজ যদি সেবা দেওয়া হয়, তাহলে এমন অবস্থা হবে কেন? তারা নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে দায়িত্ব ভুলে গেছে।
জুলাই ফাউন্ডেশনের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার মাহবুব হোসেন বলেন, "সামান্য একটা ঘটনা থেকে এমন অবস্থা কাম্য নয়। জুলাই আহতদের সঙ্গে হওয়া ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল সেটির নিশ্চয়ই সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। হামলা কোনপক্ষ আগে করেছে সেটি নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। স্টাফরা যদি হাত না দিত, তাহলে এমনটা হতোনা। আমরা চাই তদন্ত হোক।