ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ। শাহবাগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা না হলে আবারো ঢাকা মার্চের ডাক দেওয়া হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বার বার গণহত্যা এবং ফ্যাসিজমের অপরাধে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজটি করছে না। ঠিক কি কারণে করছে না তা কারো বোধগম্য নয়। বলা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে ততই দেশের মঙ্গল। দীর্ঘদিনেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করায় জনগণ রীতিমত ক্ষেপে গেছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আসলে সরকার কারো সাথে আঁতাত করছে কি-না। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখেছি কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে অতিদ্রুত নিষিদ্ধ করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার জন্য নানা যুক্তি দেখাচ্ছে। আসলে যেসব যুক্তি দেখাচ্ছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তাদের এসব যুক্তিকে অজুহাত হিসেবে দেখছে অভিজ্ঞ মহল।

দেশের সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাইছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। পাশাপাশি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি করা হচ্ছে। একইসাথে আওয়ামী লীগকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি করে আসছে। অন্যদিকে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি এনসিপির জন্ম হয়েছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং বিচারের দাবি নিয়ে। এছাড়া রাজনৈতিক ঐক্য এবং ইউনাইটেড পিপলস পার্টি আপ বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও আওয়ামী লীগের গণহত্যার ব্চিার এবং শাস্তির দাবি উঠেছে জোরালো ভাবে। এছাড়াও বাংলাদেশে আর যত রাজনৈতিক দলমত আছে সবাই আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘মার্চ টু ঢাকা’র মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আরেক নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন বাংলাদেশ টাইটেল পাবে ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’। আমরা সেই টাইটেল দেওয়ার জন্য রাস্তা ব্লকেড করব।

জনদাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা অন্তর্র্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

সকলকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামী আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এহেন শান্তনার বাণী আশার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু কথা হলো এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এতো বিলম্ব কেন ? কেন একটি অপরাধী দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য বার বার ছাত্রজনতাকে রাস্তায় নামতে হবে? কেন বার বার মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালন করতে হবে। আমরা এর পেছনে কোন গন্ধ খুঁজতে চাই না। এটুকু বলতে চাই জনপ্রত্যাশার দিকে নজর দিয়ে আওয়ামী লীগকে অতিদ্রুত নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন। অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করুন।

আওয়ামী লীগ আগেও ক্ষমতায় ছিল এবং জনগণ ও বিরোধী মতের রাজনীতিকদের ওপর জুলুম অত্যাচার চালিয়েছে। কিন্তু এভাবে গণহত্যা চালায়নি। এজন্য ওই সময়ে আওয়ামী লীগের বিচার চাওয়া হয়নি। শেষ বার ক্ষমতায় এসে ফ্যাসিজম কায়েম করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শাপলা চত্বরে হেফাজতের আলেমদের হত্যা, পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যা, গুম, খুন, আয়না ঘর সবশেষ জুলাই আগস্টে গণহত্যা চালায়। জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে নির্ঘাত গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুতরাং গণহত্যার এত সাক্ষীপ্রমাণ থাকার পরও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিলম্বিত হওয়া নিন্দনীয়।

আমরা দেখেছি যুগে যুগে যারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে তারা জনগণ দ্বারা ধিকৃত হয়েছে। তারা নিষিদ্ধ হয়েছে সরকার দ্বারা। তাদের বিচার করা হয়েছে বহুদিন পরও। বাংলাদেশে আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে। এই সময়ে দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে জনদাবি উঠেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক। সেই জনদাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকারের উচিত আওয়ামী লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ করা। দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় আনা। সাথে যারা দেশে রয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা। বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সব জায়গা থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এভাবে যদি আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হয় আর তাদের বিচারের আওতায় আনা না হয় তাহলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে; অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের ত্যাগ, আত্মোৎসর্গ বিফলে যাবে। তাজা রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দ্বিতীয় স্বাধীনতা বিফলে নিরর্থক হয়ে যাবে।