মালয়েশিয়া সরকারের সব শর্ত মেনে নিয়ে দ্রুত যে কোনো মূল্যে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইস্কাটন গার্ডেনে প্রবাসী কল্যাণ ভবন প্রাঙ্গণে বায়রার সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করে এই দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে জনশক্তি রপ্তানি ও বৈদেশীক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, অন্য ১৩টি দেশ মালয়েশিয়া সরকারের শর্ত মেনে নিয়ে তাদের শ্রমবাজার চালু রাখলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকখানি পিছিয়ে। ফলে ১২ লাখ কর্মীর যে চাহিদা মালয়েশিয়ার রয়েছে সেই বাজার বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হারাতে বসেছে ৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।

মানববন্ধনে বায়রার সদস্যরা বলেন, তারা প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মীকে বৈদেশীক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রেরণ করে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সৌদি আরবের পর মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হলেও ২০২৪ সালের ৩১ মে’র পর মালয়েশিয়া সরকার অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে সব সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কাতার, ইরাক, লিবিয়াসহ অন্যান্য গন্তব্যেও শ্রমবাজার বন্ধ বা খুব সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। সৌদি আরবে কর্মী গমন চলমান থাকলেও অনেকেই প্রতিশ্রুত কাজ ও বেতন পাচ্ছেন না এবং আগত কর্মীরাও নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব বিষয়ে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান জরুরি। তারা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার প্রক্রিয়ায় একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বাধা সৃষ্টি করছে। তারা মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মিথ্যা অভিযোগ তুলে দুই দেশের মধ্যে সই করা সমঝোতা স্মারক ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বৈধভাবে কর্মী প্রেরণ চললেও এ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ের কারণে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার এখনো উন্মুক্ত করেনি, যা দেশের কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বায়রার সদস্যরা আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার পুনরায় চালু হলে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ করে মোট ১০ লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হতে পারে। আগেও ২০২২-২৪ মেয়াদে বৈধ উপায়ে প্রেরিত কর্মীদের ক্ষেত্রে কোনো মানবপাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ মেলেনি, যা মালয়েশিয়া সরকারের তদন্ত এবং দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তাই শ্রমবাজারকে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের বলী না করে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্মারকলিপিতে বায়রার সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে স্বল্প ব্যয়ে নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে মালয়েশিয়াসহ সব বন্ধ শ্রমবাজার খোলার ব্যবস্থা করা হোক। দেশ ও কর্মীদের সার্বিক স্বার্থে সরকার যে পদ্ধতিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করবে, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হিসেবে সেটা যথাযথভাবে অনুসরণ করে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবো।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আল সুপ্ত ওভারসিসের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ মজুমদার, পূরবী ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, আর্থ স্মার্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ইএমএস ইন্টারন্যাশনালের এএমএস সাগর, তাসনিম ওভারসিসের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, আল আকাবা অ্যাসোসিয়েটের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিশ্বাস, আল গিফারীর সাগর মাহমুদ, স্কাইল্যান্ড রিক্রুটিংয়ের মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আরমান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ সাজ্জাম হোসেন, ফ্রিডম ওভারসিসের কফিল উদ্দিন মজুমদার, এসএফ গ্লোবালের হাওলাদার ফোরকান উদ্দিন ও দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।