চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শিগগির দেশে ফিরবেন তিনি। যদিও ফেরার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মা বেগম খালেদা জিযার সঙ্গে দেশে না আসলেও দুই পুত্রবধূকে সাথে আসবেন বলে জানা গেছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। যদিও তার দেশে ফেরা নিয়ে কোনো ধরনের আইনগত জটিলতা নেই।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানান জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তার লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক রোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, গত কয়েকদিন ধরে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে এপ্রিলের শেষের দিকে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন। তবে সেটি আগামী মে মাসে হতে পারে। মে মাসের পথম সপ্তাহেই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সংগ্রামকে বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ফেরার তারিখ নির্ধারণের আগে তার চিকিৎসকদের মতামত ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয় রয়েছে। দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে আনতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম শিগগির দেশে ফিরবেন। তিনি চিকিৎসকদের সবশেষ আফডেট নিচ্ছেন। ডা. জাহিদ আরও জানান, ওনার আরও যে ব্লক আছে, সেটা অ্যাড্রেস করা দরকার, ওনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটা অ্যাড্রেস করতে হবে। করোনা পরবর্তীসময়ে কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই আলোচনা ছিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। বহুল আলোচিত একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ অধিকাংশ মামলায় তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগ মুহূর্ত থেকে আলোচনা ওঠে, হয়তো ছেলেকে নিয়েই তিনি দেশে ফিরবেন। দলের সিনিয়র নেতারাও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। দেশে ফিরতে খুব বেশি আইনি জটিলতা নেই বলেই দাবি তাদের। তাহলে দেশে ফিরছেন না কেন, কিংবা দেশে ফেরার বিষয়ে তিনি এখন কোন অবস্থানে আছেন?
এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রচলিত নিয়ম ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার জন্য তো মামলা কোনো বাধা হতে পারে না। মামলা কোনো বাধা ছিল না, এখন পর্যন্ত নেই। অবশ্যই তিনি দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন। যথাসময়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে খালেদার দেশে ফেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের।একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ম্যাডাম দেশে ফিরলে দলীয় কর্মসূচি নতুন করে গতি পাবে। কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ম্যাডাম দেশে ফিরবেন এটা দলের পক্ষ থেকে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা জেনেছি উনি আগের চেয়ে সুস্থ। উনি দেশে ফিরলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ম্যাডাম যৌথভাবে দল গঠনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।