স্টাফ রিপোর্টার: ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তিনি যেখানেই থাকতেন তার সহকর্মীদেরকে তিনি পুরাপুরি তার অন্তরের বিছানায় ধরে রাখতেন। এই অঙ্গনে সাধারণ একজন সংস্কৃতিকর্মী, একজন শিল্পী, একজন সাহিত্যিক, একজন কবি, একজন প্রবন্ধকার অসুস্থ হলে তিনি অত্যন্ত মায়াবী করে বলতেন, আমীরে জামায়াত আপনি কি একবার যাবেন? লোকটাকে দেখে আসলে উনি প্রশান্তি পাবে। তার কাজকে অনুসরণ করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার একটি মিলনায়তনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সমকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মুজাহিদীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় গবেষণা কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী জামায়াতে ইসলামী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, বিশিষ্ট কবি মোশাররফ হোসেন খান, দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের অন্যতম উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, কিডস ক্রিয়েশন টিভির সিইও শরীফ বায়জীদ মাহমুদ, বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম মণ্ডল, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি আবেদুর রহমান ও সেক্রেটারি ইব্রাহীম বাহারী, প্যানভিশন টিভির সিইও মাহবুব মুকুল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দেশীয়’র সেক্রেটারি ড. মনোয়ারুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন শিশুসাহিত্যিক শরীফ আবদুল গোফরান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক নাসির হেলাল, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, নাট্যনির্দেশক ও নাট্য গবেষক ডা. আবু হেনা আবিদ জাফর, অ্যাডভোকেট পারভেজ, সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিকুল হায়দার প্রমুখ। ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহর পরিবার থেকে উপস্থিত ছিলেন তার সহধর্মিণী রাবেয়া বেগম, বড় ছেলে মুসান্না, ছোট ছেলে মুয়াজ ও তার ৩ কন্যা।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তিনি সেই মহান সত্তা যিনি তোমাদেরকে মউত এবং হায়াতের নিয়ামত দান করেছেন। যেন পরীক্ষা করতে পারে তোমরা কতটুকু নিজেরা নেক আমল করো, আমলে সলেহ করো হুসনে আমল করো। মনে রাখবা আল্লাহ তাালার নিয়ামতের বিদ্রোহ যারা করবে, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর, দুনিয়ায় তারা অপমানিত লাঞ্ছিত, আখেরাতে তারা হবে বঞ্চিত। যারা ঈমান আনার পর নফসের ধোঁকা কিংবা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় আল্লাহ তাালার অপছন্দের কোন কাজ করে ফেলবে। এর পরপরই অনুতপ্ত হবে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। তারা তাদের মওলাকে ক্ষমাকারী হিসেবে পাবে। আল্লাহ যা বলেছেন সত্য বলেছেন।

তিনি বলেন, আ জ ম ওবাদুল্লাহ ভাই সম্পর্কে আজকে যারা কথা বলেছেন, তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় এ কথাগুলো আমার বিশ্বাস কেউ বলেনি। সে মানুষটাই ভালো মানুষ শ্রেষ্ঠ মানুষ। যারা আড়ালে আবডালে মানুষ তার ভালো কাজের কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধার সাথে এবং তার জন্য অন্তরের ভিতর থেকে অন্তস্থল থেকে দোয়া করে। উনাকে কেন্দ্রের প্রয়োজনে এই সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট এবং আরো কিছু বড় দায়িত্বের জন্য যখন আমরা চিন্তা করলাম, উনার সাথে বসলাম উনাকে আমি বললাম, আপনাকে ক্রমান্বয়ে চট্টগ্রাম থেকে এখানে চলে আসতে হবে। তিনি বললেন, আমার কোন আপত্তি নেই। আমি তো আমার সমস্ত সত্তা আল্লাহর জন্য সঁপে দিয়েছি। আমি বললাম আপাতত আপনি সপ্তাহের দু’দিন করে এখানে সময় দেন। এ কথাটা বলার ক্ষেত্রে আমি তার এবং তার পরিবারের উপর বিচার করি। পাঁচদিন তার পেশাগত ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করার পর দুটো দিনে পরিবার ও আমরা ছিলাম। এ দুটো দিন আমাদেরকে দিয়ে দিতো। যখনই প্রয়োজন হতো বলতাম যে, আগামী তারিখ আপনাকে অমুক দেশে এতটুকু সময়ের জন্য যেতে হবে, কখনো একটিবারের জন্য বলেননি আমার তো অন্য একটা এসাইনমেন্ট আছে।

তিনি আজম ওবায়দুল্লাহ সম্পর্কে আরো বলেন, তিনি একমাত্র ব্যক্তি যাদেরকে আমি বিদেশে পাঠিয়েছি ফিরে এসে তার সফরের একটা ব্রিফ রিপোর্ট লিখিত আমাকে দিতেন। হাতে যাওয়ার সময় কিছু হাত খরচ দিতাম। কোন সময় ইনট্যাক্ট ফেরত দিতেন আবার কোন সময় তার সাথে যোগ করার আরো কিছু অর্থ দিতেন। আমি জিজ্ঞেস করতাম যে আপনাকে দেওয়া হয়েছে তো বাকিটা কোথা থেকে আসলো? বলতেন যে ওই সফরে কিছু মানুষ আমাকে গিফট করেছে। যেহেতু আমি সংগঠনের প্রয়োজনে এবং সংগঠনের খরচে গিয়েছি। কাজেই গিফটা আমাকে সম্মান করে দিলেও এটি আমার পাওনা নয়। হে আল্লাহ, শান্তি এবং বিশ্রাম বিরাম দিতে পারি নাই অবিরাম চলে গেলেন, তার সমস্ত বিশ্রামের ঘাটতি আল্লাহ এখন তুমি তাকে পূরণ করে দাও। পরম প্রশান্তি এবং বিশ্রামে তাকে তুমি তোমার জান্নাতের বাগিচায় রাখো। তার আপনজনেরা বঞ্চিত কিন্তু তার এই ইনভেস্টমেন্ট শুধু তার জন্য নয় এই ইনভেস্টমেন্ট পরিবারের সদস্য এবং আপনজনদের জন্য। বেশিরভাগ সময় তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন আমি চট্টগ্রামওলাদেরকে বলেছিলাম, এই মানুষটার উপরে চাপ হচ্ছে, তোমরা ছেড়ে দাও, তিনি চলে আসুক। কিন্তু তারা ছাড়লো না, যার কারণে চাপটা আরো বেশি হয়েছে। চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় এই অঙ্গনে সাধারণ একজন সংস্কৃতিকর্মী, একজন শিল্পী, একজন সাহিত্যিক, একজন কবি, একজন প্রবন্ধকার হয়তোবা অসুস্থ হয়েছেন, তিনি ওখান থেকে এটেনশন ড্র করে অত্যন্ত মায়াবী করে বলতেন, আমীরে জামায়াত আপনি কি একবার যাবেন? লোকটাকে দেখে আসলে উনি প্রশান্তি পাবে। আমার মত মনে হতো তিনি যেখানেই থাকেন তিনি তার সহকর্মীদেরকে পুরাপুরি তার অন্তরের বিছানায় ধরে রাখেন। আমরাও দায়িত্ব পালন করি। আমি তো পারি নাই। যদিও পারা উচিত। তার ইন্তিকালের সাথে সাথে খুঁজছি, এই জায়গায় এখন কার উপর চাপ দেব, পাচ্ছি না এখন পাইনি, আল্লাহর কাছে আরজ করি আল্লাহ যেন জায়গাটা পূরণ করে দেন।

তিনি বলেন, আমার একটা আফসোস থেকে গেল, জানাযায় দাফনে থাকতে পারলাম না। লাশটা নিজের হাতে কবরে শোয়াতে পারলাম না। কম যোগ্যতার মানুষ হওয়ার কারণে পরিশ্রম করতে হয় বেশি। ফলে সব জায়গায় সময় মত লাব্বায়িক বলতে পারি না। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন, সন্তান তার সাথে কথা বলতে পারে নাই। শেষ মুহূর্তে জীবিত অবস্থায় মুখ দেখতে পারে নাই। আমাদের এই আফসোসটুকু আল্লাহ যেন জান্নাতের সিঁড়িতে পূরণ করে দেন।

তিনি তার পরিবার সম্পর্কে বলেন, তার পরিবারের প্রতি আমাদের দোয়া, যে পথে চলতে গিয়ে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, তিনি মহান রবের দরবারে সম্মানিত হয়েছেন। তারা যেন এই সম্মানের রাস্তাটা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরে। আল্লাহ তাদেরকে যেন তৌফিক দান করেন। মূল অভিভাবক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, এটা তো আল্লাহ নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের কাজ কাম করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ বলতেছেন আমি তো যথেষ্ট। আমি তোমাদের অভিভাবক হিসেবে যথেষ্ট। আমরা বলতেছি আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। আমরা কেউ যেন এটা মনে না করি যে এখন এই সাহায্যটা কে করবে? আল্লাহ এর পরেরটা বলতেছেন, তিনি তো তোমাদের জন্য উত্তম সাহায্যকারী। আল্লাহ মেহেরবানী করে এই পরিবারের পূর্ণ অভিভাবকত্ব কবুল করুন।

তিনি বলেন, আমরা যারা তার সহকর্মীবৃন্দ তার জীবনের ভালো কাজের এই প্রবন্ধ, কবিতা আমি হাতে লেখা কবিতা প্রবন্ধ বলছি না, আমি কাজের বাস্তব কবিতা বলছি সে কবিতাগুলো যেন মন দিয়ে বুঝি পাঠ করি অনুসরণ করি আল্লাহ যেন তৌফিক দেন, যে ঘাটতিতে পড়েছি আল্লাহ যেন এটা পূরণ করে দেন। পরিবারকে যেন আল্লাহ সবরে জামেলা দান করেন। ভাইকে যেন আল্লাহ তালা জান্নাতের সম্মানিত স্থান দান করেন। এই যে লোকগুলা পরস্পরকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, কঠিন ময়দানে আল্লাহ যেন আমাদের একটা মহামিলন ঘটিয়ে দেন। সিদ্দিকিন সলেহীনদের সাথে আল্লাহ যেন আমাদের সকলের এবং আমাদের ভাইয়ের হাশর নসিব করেন। যদি এটুকু আমাদের কিসমতে এসে যায় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিয়ে দেবেন। এটি আমাদের চরম এবং পরম আকাক্সক্ষা। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি পাওয়া হবে আমাদের জন্য চরম পাওনা। সুবহানাল্লাহ।

বক্তারা বলেন, ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ ছিলেন এদেশে সুস্থ ধারার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বহুমুখী প্রতিভাধর এক অনন্য দিকপাল। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি সফল সংগঠক ও আদর্শিক সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রচারে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, গীতিকার, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংগঠক, শিক্ষাবিদ মোটিভেশনাল স্পিকার ও বহু ভাষাবিদ। তার চলে যাওয়া মানে শুধু একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া নয়, বরং একজন স্বপ্নচারী গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষানুরাগীকে হারালো গোটা জাতি। মহান রাব্বে কারীম তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।

দোয়া মাহফিলে ড. ওবায়েদুল্লাহর লেখা ‘মুসলিম আজ ওঠো জেগে’ শিল্পী ওমর ফারুক, ‘রাত কেটেছে স্বপ্নে বিভোর’ শিল্পী ওবায়দুল্লাহ তারেক, ‘জনতা সাগরে বলে যেতে চাই’ মহানগর শিল্পীগোষ্ঠী এবং ‘বহতা নদীর মতো’ গান পরিবেশন করেন শিল্পী তাওহীদুল ইসলাম। নিবেদিত গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ সংগীত কেন্দ্রের সহ-সভাপতি সাইফুল আরেফিন লেলিন।