বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখ লাখ টন শিল্প বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এসব অধিকাংশ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই নদী, খাল, নালা ও খোলা জমিতে ফেলায় পরিবেশ দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়ছে। ‘প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা প্রস্তুতি’ বিষয়ক বিশেষ এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগরায়ণ ও নগর সুশাসনবিষয়ক প্রোগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসানুল বান্না ও গাউস পিয়ারী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। শিল্পের ও মানুষের ব্যবহৃত বর্জ্য সরাসরি নদী বা নালাতে ফেলানো হয়। বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্য থেকে তরল বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয়ে মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঢাকা বা এর আশপাশে নদীগুলোতে অব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ফেলায় পানি চলাচলে বাধা হয়ে মশার বিস্তার হয়, একই সঙ্গে দুর্গন্ধে রোগ জীবাণু বিস্তার করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিল্প বর্জ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব বর্জ্য থেকে নির্গত বিষাক্ত উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করলে ত্বকে অ্যালার্জি, চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বর্জ্যরে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, শিল্পবর্জ্য সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করতে হবে। শিল্পমালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং নিয়মিতভাবে মনিটরিং করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারকে শিল্প অঞ্চলভিত্তিক আধুনিক সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) গড়ে তোলা এবং রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিকে উৎসাহ দিতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা শিল্প বর্জ্যরে প্রভাব সম্পর্কে জানে এবং ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প উপকরণ ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে বর্জ্যরে পরিমাণ কমে আসে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা বাজারে যাই খালি হাতে, বাড়িতে নিয়ে আসি প্লাস্টিক। আর এগুলো বর্জ্যে পরিণত হয়। শিক্ষিত শ্রেণি পর্যন্ত এসব বিষয়ে উদাসীন। পলিথিনের ব্যবহারের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু ব্যবহারের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, তা দাবি আকারে সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। সরকারের যথাযথ উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হওয়া দরকার।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল ভূমিকম্প ও নগর প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, ১৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ভূমিকম্পন প্রবণের দিক থেকে ১৫তম অবস্থানে। সিলেট অঞ্চল সবচেয়ে বেশি প্রবণ এলাকা।
তিনি বলেন, রাজধানীতে ৯৫ শতাংশ ভবন নিয়ম না মেনেই তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত জনসংখ্যা তৈরি, নীতিমালা নিয়ে ভবন নির্মাণসহ ছয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে টাস্ক ফোর্স গঠন করে ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রবণ ভবন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানান তিনি।
আইনজীবী হাসানুল বান্না বলেন, ‘যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে প্লাস্টিক প্রোডিউসারগুলোকে ম্যানেজমেন্ট করা দরকার, অথচ সেটি আমাদের দেশে নেই। এটি রুলসের আওতায় আনতে হবে। প্লাস্টিক রিফিউজ করা গেলে পরিবেশগত ভালো হবে। মেডিকেল, শিল্প ও মানবসৃষ্ট বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে দেশে ২০০-এর বেশি পরিবেশ বিষয় নিয়ে আইন আছে, কিন্তু সেটির কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এ জন্য দরকার যথাযথ আইনের প্রয়োগ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।