হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন ‘শুভ মহালয়া’। গতকাল রোববার এর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়। এদিন ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয়। মহালয়া উপলক্ষে চ-ীপাঠ ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ও ম-পে ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দশভুজা শক্তিরূপে দেবী দুর্গা ম-পে ম-পে অধিষ্ঠান করবেন। শেফালিঝরা শারদ প্রভাতে জলদকণ্ঠে চ-ীপাঠ আর পিতৃপক্ষের তর্পণের সমাপন ঘটে। এই চ-ীপাঠেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির কাহিনি। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। তাদের বিশ্বাস, শরতের আকাশে-বাতাসে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে ‘রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি’-র সুরলহরি। ঘনঘটার অমাবস্যা তিথিতে ঢাকের কাঠির আঘাতে প্রাণ জেগে ওঠে।
হিন্দু পুরাণে বলা আছে, দুর্গোৎসবের তিনটি পর্বÑ‘মহালয়া’, ‘বোধন’ ও ‘সন্ধিপূজা’। মহালয়ার দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারত না। ফলে অসীম শক্তিধর মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে বিশ্বব্রহ্মা-ের অধিপতি হতে চাইলে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিংহবাহিনী সঙ্গে নিয়ে দেবী দুর্গা টানা নয় দিনের যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও বধ করেন।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত গতকাল থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। মহালয়া উপলক্ষে মন্দির ও পূজা কমিটিগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় পূজা ম-পে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চ-ীপাঠ, চ-ীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজাম-পে ভোর থেকেই মহালয়ার ঘট স্থাপন করা হয়েছে।