ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন-বললেন প্রেস সচিব

ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে নজরদারি জোরদার করবে সরকার। এ ছাড়া এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এ বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে ৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান,পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়াও বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত কয়েক দিনে তেজগাঁওসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছেন বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুর এবং নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়াসহ গত কিছু দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয় ফ্যাসিবাদি শক্তি যখন দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুতই এগোচ্ছে তখন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এর ফলে তারা দেশের শান্তি বিনষ্ট করার জন্য গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। এটা এখন শুধু আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নয়, এটা একটা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরও বলেন, গত কিছু দিনে কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেটির আলোকেই এই বৈঠক। যেসব ঘটনা ঘটছে স্থানীয় প্রশাসন যেন এ ধরনের ঘটনা আরও শক্তভাবে মোকাবিলা করে, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জুলাইকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক ঐক্য হয়েছিল, সেটাকে ধরে রাখার বিষয়েও জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। নির্বাচন সামনে রেখে যাতে কোনো নিরাপত্তাজনিত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই নির্বাচন ঠেকানোর। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব জানান, আসন্ন এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। শফিকুল আলম বলেন, পরাজিত শক্তি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে সব শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।