টানা তৃতীয় বছরের মতো লোকসানের ধারা অব্যাহত রেখেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৭৭২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। গত টানা তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাখিল করা কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অনুযায়ী, লোকসানে থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই লভ্যাংশ ও আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটি আগামী ২৪ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ডেকেছে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলস চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭১১ কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে। আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল কোম্পানিটির। মূলত সিস্টেম লস বাড়ার পাশাপাশি কর আইনে পরিবর্তন আসার কারণে এ লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
তিতাস গ্যাসের চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরের প্রথমার্ধের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, এ সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। যদিও এ আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির ১৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এতে ৩২৯ কোটি টাকা গ্রস লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। আগের বছরের একই সময়ে ১৭১ কোটি টাকা গ্রস মুনাফা হয়েছিল। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির ৬২১ কোটি টাকা নিট পরিচালন লোকসান হয়েছে, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২৩ কোটি টাকা।
গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানিটির চলতি কর বাবদ ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২১ কোটি টাকা। ফলে প্রথমার্ধে কোম্পানিটির ৭১১ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ৪৭ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ১৯ পয়সা লোকসান হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৪৭ পয়সা।
লোকসানের কারণ সম্পর্কে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তিতাস গ্যাসের ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ সিস্টেম লস হয়েছে, যেখানে এর অনুমোদিত সীমা ২ শতাংশ। এ কারণে কোম্পানিকে আয় না পাওয়া সত্ত্বেও বড় অংকের ক্রয় দায় বহন করতে হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালে কর আইন অনুসারে, ন্যূনতম কর গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য ছিল না। ফলে সে সময় কোম্পানির প্রকৃত কর দায়ের বিপরীতে উৎসে কেটে নেয়া বাড়তি কর ফেরত পাওয়ার দাবি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু অর্থ বিল ২০২৪-এ এ বিধান বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে উৎসে কেটে নেয়া পুরো করের পরিমাণকেই কোম্পানির চলতি কর হিসেবে বিবেচনা করতে হচ্ছে।
প্রকৃত কর দায়ের তুলনায় উৎসে কেটে নেয়া করের পরিমাণ বেশি হলেও সেটিকেই বর্তমানে ন্যূনতম কর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে উৎসে কেটে নেয়া পুরো করের পরিমাণকে কোম্পানির চলতি কর হিসেবে বিবেচনা করতে হয়েছে এবং এর ফলে বড় অংকের নিট লোকসান গুনতে হয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে তিতাস গ্যাসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭ টাকা ৫২ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৬৭ পয়সা। গত ৩০ জুন ২০২৪ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৯৮ টাকা ১৫ পয়সায়।
গত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬৭ পয়সা। আগের হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ২১ পয়সা। গত ৩০ জুন ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৭১ টাকা ৭৫ পয়সায়।
গত ২০২১-২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল তিতাস গ্যাস। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ২১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ৫০ পয়সা। ৩০ জুন ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৭৪ টাকা ১৬ পয়সায়।
সমাপ্ত ২০২০-২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ২২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় তিতাস গ্যাস। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরের জন্য ২৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিতাস গ্যাসের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৯৮ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৮৩১। এর মধ্যে সরকারের হাতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক, দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বিদেশী ও ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।